জয়ের ‘বিলম্বিত প্রজ্ঞাপন’ নিয়ে বিএনপির সন্দেহ

সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে সরকারের ‘বিলম্বিত প্রজ্ঞাপন’ জারিকে ‘রহস্যজনক’ বলেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2014, 09:43 AM
Updated : 21 Nov 2014, 11:52 AM

শুক্রবার সকালে এক আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, “আমার ঘনিষ্ট বন্ধু ড. ওয়াজেদ মিঞার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তাকে নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। তবে তার নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন নিয়ে কিছু বলতে চাই।

“প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই জয় তার উপদেষ্টা। তখন কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। এখন কেন প্রজ্ঞাপন জারি করার প্রয়োজন হলো? এর মধ্যে কী রহস্য রয়েছে? সরকারকে তার জবাব দিতে হবে।’’

প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে গত ১৭ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি হয়, যা প্রকাশ পায় বৃহস্পতিবার।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “এই দায়িত্ব পালনে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন। এই নিয়োগ খণ্ডকালীন ও অবৈতনিক।”

আওয়ামী লীগ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জয়ের অংশগ্রহণ রয়েছে।

জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘স্বাধীনতা ফোরাম’ আয়োজিত আলোচনা সভায় রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, “জয় প্রতি মাসে ২ লাখ ডলার বেতন নেন- নিউ ইয়র্কে মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর এ রকম বক্তব্যের পর আমাদের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সরকারের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিলন। এরপরই সরকারের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো। আমার প্রশ্ন, আগে কেন প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো না।”

১৯৯১-৯৬ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে আনবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ওয়াজেদ মিয়াকে চাকরিচ্যুত করার একটি প্রস্তাব এসেছিল দাবি করে রফিকুল বলেন, “আমি যখন ওই মন্ত্রণালয়ের (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়) দায়িত্বে ছিলাম, তখনকার সচিব একটি ফাইল নিয়ে আসেন। তাতে ওয়াজেদ মিয়ার চাকরিচ্যুতির প্রস্তাব ছিল। আমি হতম্ভব হয়ে গেলাম।

ফাইল ছবি

এরপর রফিকুল তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন এবং ওই প্রস্তাব আটকে যায় দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “বন্ধু ওয়াজেদ মিয়া আনবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকলেন। এ হচ্ছেন খালেদা জিয়া, যিনি কখনো প্রতিহিংসায় বিশ্বাস করেন না।

আর যে সচিব ওয়াজেদ মিয়াকে চাকরিচ্যুত করতে ‘ফাইল নিয়ে গিয়েছিলেন’, তিনি এখন আওয়ামী লীগের পক্ষে লেখেন বলেও মন্তব্য করেন রফিকুল। 

তিনি অভিযোগ করেন, “আজ শেখ হাসিনার সরকার প্রতিহিংসায় বশবর্তী হয়ে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এটাই হচ্ছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে তফাৎ।”

৫ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বক্তব্যের সমালোচনা করে রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, “সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংর্ঘষে একজনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। এই ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে ৫ জানুয়ারি মোবাইল কোর্ট বসিয়ে ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছেন এইচ টি ইমাম।

“একটি আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন রয়েছে, তার কোনো ক্ষমতা নেই। এইচ টি ইমামই তখন কমিশনের কো-চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন।’’

৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়টি খালেদা জিয়ার ‘যর্থাথ সিদ্ধান্ত’ ছিল বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। 

“এইচ টি ইমাম যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিত্র তুলে ধরেছেন ছাত্রলীগের সভায়। খালেদা জিয়া যদি ওইরকম নির্বাচনে যেতেন, তাহলে আজ কথা বলার কোনো সুযোগ থাকত না।”

দলের নেতা-কর্মীদের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ারও আহবান জানান রফিকুল।

তিনি বলেন, “এই সরকারের ভীত নড়বড়ে। জনগণ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। একটা ধাক্কা দিলে এই সরকার উড়ে যাবে। এই ধাক্কার জন্য এখন নেতা-কর্মীদের জীবন উৎসর্গ করার সাহস সঞ্চয় করতে হবে।”

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্বাধীনতা ফোরা এই আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।

সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কু্দ্দুস তালুকদার দুলু, সহ দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, মুক্তিযোদ্ধা দলের আবুল হোসেন, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, ব্যারিস্টার পারভেজ আহমেদ আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।