খণ্ডিত বক্তব্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা: এইচ টি ইমাম

গত নির্বাচনে পুলিশ বাহিনীতে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ভূমিকা ও সরকারি চাকরি নিয়ে বক্তব্যের কারণে সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বললেন, তার বক্তব্য ‘খণ্ডিতভাবে’ গণমাধ্যমে এসেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2014, 06:22 AM
Updated : 17 Nov 2014, 06:22 AM

আর ওই বক্তব্য ‘ভুলভাবে’ উপস্থাপন করে একটি মহল ‘সরকারের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি’ ছড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন।

সোমবার সকালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এইচ টি ইমাম এ দাবি করেন। পাশাপাশি তিনি এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা চান।

এইচ টি ইমাম বলেন, “আমার বিনীত অনুরোধ খণ্ডিতভাবে নয়, বস্তুনিষ্ঠভাবে আমার সামগ্রিক বক্তব্যের সারমর্ম শুনে ও বুঝে দেশবাসীর সামনে আপনারা তুলে ধরবেন। আমি নিঃসন্দেহ আপনাদের সহযোগিতায় আমার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বলেন, “আমার বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করছেন; তারা আর কেউ নয়, তাদের কাজই হচ্ছে শুধুমাত্র অন্যের ত্রুটি খুঁজে বেড়ানো, অন্যায়ভাবে সরকারের সমালোচনা করা। ধূম্রজাল সৃষ্টি করে স্বার্থ হাসিল করা অথবা দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার গতিকে স্তিমিত করার অপপ্রয়াস যেন অনেকের কাছে নিত্যনৈমিত্তিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।”

গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার বক্তব্যের সূত্র ধরে বিএনপি বলে আসছে, ওই বক্তব্যেই সরকারের দলীয়করণ প্রমাণ হয়েছে। ওই বক্তব্যের কারণে প্রধানমন্ত্রীও তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে গণমাধ্যমের খবর।  

৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে এইচ টি ইমাম বলেন, “আমি নিজে অনেক উপজেলায় গিয়েছি। সেখানে আমাদের যারা ছিল, তাদের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে আছে। তারা বুক পেতে দিয়েছে। জামায়াত-শিবিরের হামলায় পুলিশের ১৯ জন প্রাণ দিয়েছে।”

এর ব্যাখ্যায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “স্বাভাবিকভাবেই আমি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে, এই নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতা, গণহত্যা, অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র এবং চলমান উন্নয়ন অভিযাত্রাকে ভণ্ডুল করার অপপ্রয়াসের কথাও প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করি।

“কিন্তু আমার সামগ্রিক বক্তব্য প্রকাশ বা প্রচার না করে মূল ভাবার্থের বিকৃতি ঘটিয়ে দুটি বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, “প্রশাসনিক কোনো হস্তক্ষেপ না করেই আমরা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং বিএনপি-জামায়াত চক্রের পরিচালিত নাশকতা, হত্যা, সন্ত্রাস, ভোট কেন্দ্র দখল, অগ্নিসংযোগ, প্রভৃতি প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশনকে এবং বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার প্রশাসনকে অবহিত করেছি।”

আইন ও বিধি মেনে সব কিছু করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

এইচ টি ইমাম বলেন, “আমাদের রিক্রুট করা মানে সকল প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারীকে বুঝিয়েছি, যাদের কোনো দলীয় পরিচয় ছিল না।”

সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “নির্বাচনী কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনরত কর্মকর্তাদের কাছে এ ব্যাপারে সাহায্য চাওয়া বা প্রতিকার চাওয়াকে যারা ‘কারসাজি’ আখ্যা দিয়ে ‘মুখোশ’ খুলে পড়েছে বলে উল্লাস প্রকাশ করেছেন তাদের এই বর্বরতার জবাব বাংলাদেশের জনগণই দিয়েছেন, ভবিষ্যতেও দেবেন।”

ওই অনুষ্ঠানে সরকারি চাকরিপ্রার্থী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ‘দেখবেন’ বলেও উপদেষ্টা আশ্বাস দেন।

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “প্রতিযোগিতামূলক যে কোনো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে যে কঠোর অধ্যাবসায়ের প্রয়োজন তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ছাত্রলীগের এই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছাত্র/ছাত্রীদেরকে লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রয়োজনে আমি তাদের কোচিং করানোর কথাও বলি।”

তিনি গত ছয়টি বিসিএসে নিয়োগ পাওয়াদের উদাহরণ টেনে বলেন, “অনুগ্রহ করে একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনোরকম প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টাও হয়েছে কি না? কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না? যারা নিয়োগ লাভ করেছেন তাদের মধ্যে কতজন সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন?” 

বিএনপির প্রতিক্রিয়ার জবাবে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, “যারা পানি ঘোলা করে মাছ শিকারের মওকা খুঁজছেন তারা এমনটি করছে। তাদেরকে বলব মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকুন।”

পাশাপাশি গণমাধ্যমে পুরো বক্তব্য এলে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় উপদেষ্টার ওই বক্তব্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এইচ টি ইমাম পাশে থাকা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আব্দুস সোহবান গোলাপকে দেখিয়ে বলেন, “এ নিয়ে একেক পত্রিকায় একেক রকম খবর দেখেছি। গোলাপ সেদিন ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, সেখানে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।”

তার বক্তব্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ‘সরাসরি’ কথা হয়নি বলেও উল্লেখ করেন এইচ টি ইমাম।