তারেককে ‘বিশ্ব বেয়াদব’ বললেন শাহেদা

বঙ্গবন্ধুকে নাম ধরে সম্বোধন করায় তারেক রহমানকে ‘বিশ্ব বেয়াদব’ বলেছেন বিএনপি নেতা প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমানের স্ত্রী শাহেদা ওবায়েদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2014, 02:44 PM
Updated : 10 Nov 2014, 12:11 PM

রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে পরিবারতন্ত্রের সমালোচনাও করেন এই দুটি দল করে আসা ওবায়দুরের স্ত্রী।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদের মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়া ওবায়দুর রহমান বিএনপির মহাসচিব থাকা অবস্থায় বহিষ্কৃত হয়েছিলেন।

পরে আবার বিএনপিতে ফিরে আসেন ওবায়েদ আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে শাহেদা শিক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।

ওবায়েদের মৃত্যুর পর তার মেয়ে শামা ওবায়েদ বিএনপিতে সক্রিয় থাকলেও শাহেদা দলটি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ নিউ জেনারেশন পার্টির (বিএনজিপি) আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তারেক রহমানের সমালোচনা করেন শাহেদা।

“আমার কাছে খুব খারাপ লাগে যখন উনি ভিডিও বার্তায় বঙ্গবন্ধুকে শেখ মুজিব, শেখ মুজিব বলে। রাজনীতির কথা বাদই দিলাম, আমাদের পারিবারিক শিষ্টাচার কী বলে? সে একটা বিশ্ব বেয়াদব। নানার বয়সী একজন নেতাকে নাম ধরে ডাকে।”

লন্ডনে থেকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যানের ভিডিও বার্তা পাঠানোর সমালোচনাও করেন তিনি।

“তারেক সাহেব লন্ডনে বসে বসে ভিডিও বার্তায় নেতাকর্মীদের রাস্তায় নামার নির্দেশ দেন। নেতাকর্মীরা কোনও মায়ের সন্তান নন? তারা রাস্তায় নামবেন, লাশ হবেন, জেলে যাবেন। আর উনি দামি স্যুট পরে ভিডিও বার্তা পাঠাবেন।”

“আপনি আসুন, মামলা ফেইস করুন। জেলে যান। তারপর জনগণ জেল থেকে বরণ করে নেবে,” খালেদা জিয়ার ছেলের উদ্দেশে বলেন তিনি।

বিএনপির সমালোচনা করে শাহেদা বলেন, “বর্তমান সরকারের অনেক দোষ আছে-সাফল্য আছে। অনেক ক্ষেত্রেই মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে। সেজন্য একদিন তাদের জবাব দিতে হবে।

“কিন্তু বিএনপির আন্দোলন কোথায়? এত বিশাল বিএনপি কোথায় গেল? নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে বিএনপি ব্যর্থ হল। আবার নির্বাচন বর্জন করে জনগণকে বঞ্চিত করল।”

বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ‘পরিবারতন্ত্রের’ সমালোচনা করে দুই নেত্রীর পদত্যাগ দাবিতে গত বছর একদিন হরতাল আহ্বানকারী শাহেদা বলেন, “পরিবার তন্ত্রের কারণে ৩৪ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি অন্ধকার যুগে অবস্থান করছে।

“তরুণ প্রজন্ম স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে। তারা জয়-তারেকদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রাস্তা করে দিচ্ছে। নিজেরাও যে একদিন দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারে, সে ভাবনা তাদের নেই।”

এই আলোচনায় উপস্থিত মাহমুদুর রহমান মান্নাও প্রধান দুই দলের সমালোচনা করেন, যিনি আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নাগরিক ঐক্য নামে ভিন্ন সংগঠন তৈরি করেছেন।

অনুষ্ঠানে পাশে বসে থাকা গণফোরাম সভাপতিকে দেখিয়ে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর পর ড. কামাল হোসেনের বাংলাদেশের নেতৃত্বে আসার কথা ছিল। বেগম জোহরা তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে আসার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি পরিবারতন্ত্রের কারণে।”

“সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তোফায়েল আহমেদের মতো একজন প্রবীণ নেতা চেয়ার পাননি। সেখানে অন্য একজন চেয়ার দখল করেছিল। তিনি (তোফায়েল) হয়তো ফিরে গিয়ে নিরবে কেঁদেছিলেন,” বলেন আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাংগঠনিক সম্পাদক।

ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনে খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপেরও সমালোচনা করেন ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না।

“খালেদা জিয়া সামনে বসা ব্যক্তির নাম তিনবার জিজ্ঞাস করেও মনে রাখতে পারেন না। তিনি ছাত্রদলের মতো বড় একটি ছাত্র সংগঠনের কমিটি ঘোষণা করেন কিভাবে?”

কামাল হোসেনের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়াও সভায় বক্তব্য রাখেন।

‘পরিবারতন্ত্রের বেড়াজালে বাংলাদেশের রাজনীতি’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা আয়োজনকারী বিএনজিপির তিন বছর আগে গঠিত হয়। বিএনপির সহযোগী সংগঠন ‘জিয়া ব্রিগেড’ ছেড়ে আসা জাহিদ ইকবাল এই দলটি গড়েন।