বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ‘দেশদ্রোহিতার’ মামলার দাবি তারেকের

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য করে আসা তারেক রহমান এবার বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা করার দাবি তুললেন।

সৈয়দ নাহাস পাশা লন্ডন প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2014, 05:57 AM
Updated : 6 Nov 2014, 05:57 AM

বুধবার লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপির উদ্যোগে ‘৭ই নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালনে এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে ‘স্বাধীনতাকামী মানুষের হত্যাকারী’ বলেও  আখ্যায়িত করেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক, যার বাবা জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে  জড়িত ছিলেন বলে আওয়ামী লীগের অভিযোগ।

বক্তব্যের শুরুতেই তারেক বলেন, “নতুন প্রজন্ম, যাদেরকে মিথ্যা, বিকৃত ও খণ্ডিত ইতিহাস শেখানো হচ্ছে, তাদের জানতে হবে শুদ্ধ, প্রকৃত ও সত্য ইতিহাস।”

বিএনপি নেতা খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক এরপর দুই ঘণ্টার বক্তৃতায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান এবং সেই সময়ের নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে   জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার বিষয়গুলো নিজের মতো করে উপস্থাপন করতে থাকেন।

জিয়াউর রহমান কতোটা ‘জনপ্রিয় ও নির্মোহ’ রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন তা প্রমাণের চেষ্টা দেখা যায় তারেকের বক্তব্যের একটি বড় অংশ জুড়ে। আর তা করতে গিয়ে তিনি বার বার ইতিহাসের ব্যাখ্যা হাজির করেছেন নিজের মতো করে; বঙ্গবন্ধুকে বলেছেন ‘পাকবন্ধু’। 

আর বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনায় জিয়াউর রহমানকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টায় বার বার তিনি দায়ী করেছেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদকে। এ দলের বর্তমান প্রধান ও মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর তখনকার ভূমিকা নিয়েও বিভিন্নভাবে প্রশ্ন তুলেছেন তারেক।

তারেক বলেন, “ইতিহাসের ভিত্তিতে কিছু সত্য তথ্য উচ্চারণে আমার বিরুদ্ধে নাকি দেশদ্রোহী মামলা করা হয়েছে। কথায় কথায় দেশদ্রোহী মামলা হবে কেন? ইতিহাসের প্রকৃত সত্য সবার সামনে উপস্থাপন করার জন্য যদি কারো বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী মামলা হতে হয়, তাহলে সেটি হওয়া উচিৎ শেখ মুজিবের নামে।”

তারেকের ভাষায়, শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বাংলার জনগণ নায়ক হিসাবে’ দেখতে চাইলেও তিনি বরাবরই ‘পাকিস্তানকেই নিরাপদ মনে করেছেন’।

“শেখ মুজিব একজন পাকিস্তানি নাগরিক হিসাবে এসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নিয়েছেন।... একজন পাকিস্তানি নাগরিক কেমন করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিলেন সেই প্রশ্নের আইনগত নিষ্পত্তির জন্য শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী মামলা হওয়া জরুরি।”

তারেকের দাবি, তার বাবা জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ এবং ‘প্রথম রাষ্ট্রপতিই’ ছিলেন না, তিনিই ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের ‘প্রথম নির্বাচিত’ প্রেসিডেন্ট।

জিয়া সামরিক শাসন বা ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ কোনোটাই জারি করেননি বলেও দাবি তার ছেলের।

জাসদ সভাপতি ও  তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে বক্তৃতায় বার বার  ‘জঙ্গি ইনু’ হিসাবে আখ্যায়িত করেন তারেক।

তিনি বলেন, “শেখ মুজিব হত্যার দায় তৎকালীন জঙ্গি নেতা ইনু কিংবা মেননরা এড়াতে পারেন না।

“বর্তমানে শেখ হাসিনার যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকার লিপ্সার সুযোগ নিয়ে শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগী কিংবা সমর্থক এই চক্রটি এখন অবৈধভাবে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে। ’৭৫ এর পরাজিত এই অপশক্তি এখন নিজেদের দোষ ঢাকতে তাদের অপপ্রচারের টার্গেট বানিয়েছে বিএনপিকে।”

লন্ডনের একটি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের মধ্যে শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস, কয়সর এম আহমেদ, মহিদুর রহমান, এম এ সালাম ও এম এ মালেক উপস্থিত ছিলেন।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে প্রায় এক ডজন দুর্নীতির মামলা  হয়। সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পরের বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যান তিনি।

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তখন থেকে সেখানেই রয়েছেন তারেক।  তার মা খালেদা জিয়া সম্প্রতি জানিয়েছেন, চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারেক দেশে ফিরছেন না।