নিজামীকে মন্ত্রী করা ছিল শহীদদের প্রতি ‘চপেটাঘাত’

একাত্তরে ন্যক্কারজনক ভূমিকার পরও মতিউর রহমান নিজামীর গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল খালেদা জিয়ার চার দলীয় জোট সরকার, যাকে লাখো শহীদদের প্রতি ‘চপেটাঘাত’ বলা হয় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে।

সুলাইমান নিলয়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2014, 12:50 PM
Updated : 10 May 2016, 08:02 PM

২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর তার মৃত্যুদণ্ডের এই রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল; চলতি বছর ৬ জানুয়ারি আপিল বিভাগ সেই দণ্ডই বহাল রাখে।

পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে পাবনার বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে হত্যা ও ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ; পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা এবং পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী গণহত্যার মতো ভয়ঙ্কর অপরাধে জামায়াত আমির নিজামীর সর্বোচ্চ সাজার এই রায় আসে।  

সব বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বুধবার মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর তখনকার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. ইনায়েতুর রহিম তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, “এটা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন যে, সক্রিয়ভাবে যিনি বাংলাদেশে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলেন, তাকে এই প্রজাতন্ত্রের মন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।”

“আমাদের পর‌্যবেক্ষণ হচ্ছে, তৎকালীন সরকার কর্তৃক এই অভিযুক্তকে মন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দেওয়া একটা বড় ধরনের ভুল (ব্লান্ডার) ছিল। পাশাপাশি এটা ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রম হারানো দুই লাখ নারীর প্রতি ছিল সুস্পষ্ট চপেটাঘাত। এই লজ্জাজনক ঘটনা পুরো জাতির জন্য অবমাননাকর।”

২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে মঞ্চে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময়ে মতিউর রহমান নিজামী

স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সমরনায়ক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া ২০০১ সালে সরকার গঠনের সময় মন্ত্রিসভায় নিয়েছিলেন নিজামীকে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের ওই সরকারে পাবনা-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য নিজামীকে প্রথমে কৃষিমন্ত্রী করা হয়েছিল। পরে তিন বছর শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার ওই সরকারে মন্ত্রী হিসেবে গাড়িতে জাতীয় পতাকা পেয়েছিলেন।

জিয়াউর রহমান নিজেও ক্ষমতায় থাকার সময় মন্ত্রী করেছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজুর রহমান ও আব্দুল আলীমকে।  

শাহ আজিজ আগেই মারা গেছেন। আর  আলীম যুদ্ধাপরাধের জন্য কারাদণ্ড ভোগের মধ্যেই ২০১৪ সালের অগাস্টে মারা যান।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে জামায়াত এখনও রয়েছে। তবে জোট শরিক দলের আমিরের ফাঁসি নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি তারা।

একাত্তরে আল বদর বাহিনীর প্রধান নিজামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর গোলাম আযমের মতোই পালিয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পালাবদলে ক্ষমতায় যাওয়া জিয়ার দেওয়া সুযোগে ১৯৭৮ সালে নিজামী বাংলাদেশে ফেরেন।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের পূর্বসূরি সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রধান নিজামী দেশে ফেরার পর প্রথমে জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর আমিরের দায়িত্ব নেন। এরপর সহকারী জেনারেল থেকে সেক্রেটারি জেনারেল হন তিনি। ২০০০ সাল থেকে তিনি দলটির আমিরের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।