‘দলে গণতন্ত্র না থাকলে নির্বাচনে অর্থায়নে স্বচ্ছতা আসবে না’

টিআইবি বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নিশ্চিত না হলে রাজনৈতিক অর্থায়নের স্বচ্ছতা আসবে না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2014, 07:16 PM
Updated : 28 Oct 2014, 07:16 PM

দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নির্বাচনে রাজনৈতিক অর্থায়নের স্বচ্ছতা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।

নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সমন্বিত সংগঠন ‘ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ’ আয়োজিত এই বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও আলোচনায় অংশ নেন।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এখন শুধু রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করে না, মুনাফালোভীদের হাতে রাজনীতি চলে যাচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করা যাবে না, ততদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক অর্থায়নের স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।”

পরিসংখ্যান তুলে ধরে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক জানান, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংসদ সদস্যদের মধ্যে ব্যবসায়ী ছিল ১৭.৫ শতাংশ। অথচ বর্তমানে সেটা ৫৯ শতাংশে পৌঁছেছে।

“কোনো বিশেষ পেশার লোক রাজনীতিতে আসতে পারবে না তা নয়; তবে রাজনীতি ও রাজনৈতিক অবস্থান বর্তমানে একটি মুনাফা লাভের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

নির্বাচনী ব্যয়ের অস্বচ্ছতার বিষয়ে ‘মনোনয়ন বাণিজ্যের’ কথা উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “যেটাকে বলা যায় একটা ‘ব্ল্যাক ম্যাজিক এরিয়া’। এই এরিয়াতে মনোনয়নের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়।

“নির্বাচনকেন্দ্রিক ব্যয়ের যে দৃশ্যমান হিসাব দেওয়া হয় তার বাইরে অদৃশ্য ব্যয়ের পরিমাণ অনেক বেশি।”

নির্বাচনী আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা রয়েছে বলেও মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, রাজনীতি ব্যয়বহুল হয়ে গেছে।এখন আর এটা আগের মতো নেই।

“নির্বাচনী ব্যয়সীমা যা নির্ধারিত রয়েছে তা দিয়ে এখন আর নির্বাচন করা সম্ভব হয় না। কারণ, নির্বাচন এখন  উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবে রূপ দিতে গিয়ে বিপুল অর্থ ব্যয়্ হয়। ব্যয়সীমা ২৫ লাখ টাকা  পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।”

বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক বলেন, নির্বাচনের সময় অর্থের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান না থাকলে একটি বিশেষ শ্রেণির মধ্যে রাজনীতি চলে যায়।এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন।

“বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সেই দক্ষতা বা ক্ষমতা নেই।যে তারা নির্বাচনী ব্যয় কত হচ্ছে সেটা ধরতে পারবে।”

জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জি এম কাদের বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো আসলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায় কি না সন্দেহ রয়েছে।

“বিরোধী দলে থাকলে নিজেদের স্বার্থে গণতন্ত্রের কথা বলে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার কথা বলে।অথচ ক্ষমতায় গেলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল করে দেওয়ার সংস্কৃতি তাদের মধ্যে দেখা যায়।”

ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালনা কমিটির সদস্য হারুন অর রশীদের পরিচালনায় ইডব্লিউজি’র পরিচালক আব্দুল আলীম, ডেমোক্রেসি ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক তালেয়া রহমান আলোচনায় অংশ নেন।