সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাম্প্রতিক সফরে গালফ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সন্ত্রাসবাদ দমনে নিজের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেছেন, জঙ্গিবাদী পথে জামায়াতে ইসলামীকেও কোনও হুমকি হয়ে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।
টানা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আসা শেখ হাসিনা গত ২৫ অক্টোবর আমিরাত সফরে যান। এই সফরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ক একটি চুক্তিও সই হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ দমনের পাশাপাশি অস্ত্র, মাদক ও মানবপাচার রোধে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো এই চুক্তির উদ্দেশ্য।
সফরের একটি সময়ে আবুধাবিতে হোটেল সেন্ট রেগিস-এ আমিরাতের ইংরেজি দৈনিক গালফ নিউজকে সাক্ষাৎকার দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ছাপানো সংস্করণে প্রকাশের পর তা নিজেদের ওয়েবসাইটেও তুলেছে সংবাদপত্রটি।
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে গালফ নিউজের সাংবাদিক বিনসাল আবদুল কাদেরের প্রশ্নে শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ধরে রাখার কথা বলেন।
“২০০৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পরপরই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমার সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করে ধর্মীয় জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের মূলোৎপাটনের পদক্ষেপ শুরু করে। গত সাড়ে পাঁচ বছরে এই ক্ষেত্রে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য পেয়েছি।”
সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটা এখন মোটামুটি বলাই যায় যে বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত।
যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামীর তৎপরতার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির সাংবাদিক, যে দলটির বিরুদ্ধে ভারতীয় উপমহাদেশে জঙ্গিবাদী দর্শন প্রচারের অভিযোগ রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গত ৬০ বছরেও জামায়াত রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ কোনও স্থান করে নিতে পারেনি।
“তাই আমি মনে করি, তারা কোনওভাবেই শক্ত কোনও অবস্থান তৈরি করতে পারবে না এবং নিরাপত্তার জন্য কোনও হুমকি হয়েও উঠতে পারবে না।”
পাকিস্তানে তালেবান গোষ্ঠী শক্তিশালী হয়ে উঠলেও তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোনও প্রভাব রাখতে পারবে না বলেও মনে করেন তিনি।
ইরাক ও সিরিয়ায় গজিয়ে ওঠা ইসলামিক স্টেটকে বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য কোনও হুমকি মনে করেন না শেখ হাসিনা।
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের তরুণদের যোগ দেওয়ার যে খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে আসছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে কারও এই জঙ্গি দলে যোগ দেওয়ার খবরও তিনি শোনেননি।
আইএসকে মোকাবেলায় আরব দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপে বাংলাদেশের সমর্থন থাকবে বলে জানান শেখ হাসিনা। তবে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নাকচ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সব দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে শ্রদ্ধাশীল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যদি ইরাক কিংবা সিরিয়ায় জাতিসংঘের উদ্যোগে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালানো হয়, কেবল তাতেই তার দেশ অংশ নেবে।
আমিরাত সফর শেষে সোমবার রাতে ঢাকা ফিরেছেন শেখ হাসিনা।