মাটি নেই শেখ হাসিনার পায়ের নিচে: ফখরুল

বিএনপি নয়, বরং বর্তমান সরকারই জনসমর্থন হারিয়েছে বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2014, 05:22 PM
Updated : 25 Oct 2014, 05:22 PM

শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, খালেদা জিয়ার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। তাকে বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়ার নয়, আপনার পায়ের নিচেই মাটি নেই।

“শেখ হাসিনাকে বলব, নিজের কথা ভাবুন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী তাসের ঘরে মধ্যে বসে আছেন। বালুচরে তিনি বসবাস করছে, যার কোনও ভিত্তি নেই। একবার জনগণের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখুন, আপনার প্রতি তাদের লেশমাত্র মায়া নেই। দেশের মানুষ আর আপনাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।”

অলি আহাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবাষিকীতে অলি আহাদ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে আলোচনা সভায় বক্তব্যে একথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।

তিনি বলেন, “১৯৭২-৭৫ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকাকালে গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিল। এবার তারা গণতন্ত্রকে দ্বিতীয়বারের মতো হত্যা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।”

একই দিন দলের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ফখরুল বলেন, “দেশে এক ভয়াবহ রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। সরকার এটা উপলব্ধি করছে না।

“সরকারকে বলতে চাই, চোখ বন্ধ করে, উট পাখির মতো বালুর ভেতরে মুখ গুঁজে রাখলে এই সঙ্কট থেকে পার পাওয়া যাবে না। সবার অংশগ্রহণে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে।”

নয়া পল্টনে একটি হোটেলে দলের নবম প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয়। জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিমের নেতৃত্ব ৬০ জন কেন্দ্রীয় নেতা এতে অংশ নেন।

দিনব্যাপী এই কর্মশালায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আলোচনা করেন।

নির্দলীয় সরকার নিয়ে আলোচনা নাকচ করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, “শেখ হাসিনা যেভাবে দম্ভোক্তি করছেন, তাকে আর যাই বলা যাক, গণতন্ত্র বলে না। তার এরকম বক্তব্য কোনওভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

“আমরা সহিংসতায় বিশ্বাস করি না। সেজন্য বারবার সংলাপের কথা বলছি। একে দুর্বলতা ভাবাটা ঠিক হবে না।”

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান সরকারের বৈধতা নেই দাবি করে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, “দেশে একটি স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। জনগণ এই সরকারকে মানে না।”

সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করতে সবাইকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

শ্রমিক দলের নেতাদের উদ্দেশে বিএনপি নেতা বলেন, “প্রশিক্ষণের কোনও বিকল্প নেই। অবশ্যই সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিতে হবে। অনানুষ্ঠানিক বেসরকারি খাতে শ্রমিক দলের প্রসার বৃদ্ধি করতে হবে। এসব খাতে বাম সংগঠনগুলো কাজ করছে। আমাদেরও এই খাতে কাজ করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে বিএনপির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জাফরুল হাসান, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী আসাদুজ্জামান ও কবির মুরাদ উপস্থিত ছিলেন।

প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠানে বক্তব্যে যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান ফখরুল।

“বিনা কারণে মিথ্যা মামলা দিয়ে আলালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিরোধী দলের মতকে স্তব্ধ করে দিতেই এটা করা হয়েছে। ঘরের ভেতরে তিনি (আলাল) কর্মীদের নিয়ে আলোচনা করছিলেন, পুলিশ তাদের সবাইকে ধরে নিয়ে গেল! এভাবে গ্রেপ্তার করা কোন গণতন্ত্রে পড়ে।”

অলি আহাদ স্মৃতি সংসদের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সানাউল্লাহ মিয়া, অলি আহাদের মেয়ে রুমেন ফারহানা।