‘আমি ভালো লোক, তাই আওয়ামী লীগ নিয়েছে’

নিজেকে ‘ভালো লোক’ দাবি করে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার চার খুনের প্রধান আসামি সাবেক বিএনপি নেতা আবুল বাশার কাশু বলেছেন, সে জন্যই তাকে দলে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

মজিবুল হক পলাশবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2014, 04:42 PM
Updated : 26 Oct 2014, 08:06 AM

সদাসদি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাশার গত সোমবার নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুকে সোনার কোট পিন উপহার দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

ওই আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান আঙ্গুরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে এক সময় পরিচিত বাশারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের চার সমর্থককে ২০০২ সালে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ রয়েছে।

অভিযুক্ত আসামির ক্ষমতাসীন দলে এই যোগদান নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ভালো লোক দেখেই এমপি সাহেব (নজরুল ইসলাম বাবু) আমাকে দলে নিয়েছেন।”

নজরুল ইসলাম বাবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবুল বাশার আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।”

বাশার দলের সদস্যপদ পূরণ করেছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছেন।”

বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বাশার বলেন, “স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর উন্নয়নমূলক রাজনীতি এবং বিগত দিনের এমপির (বিএনপির আঙ্গুর) বিরূপ কর্মকাণ্ড দেখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি।”

এই বিষয়ে আঙ্গুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুনের জন্য আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করতেও চেয়েছিলাম। সে আমাকে মামলা থেকে বাঁচার জন্য অনেকবার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু আমি তাকে বলেছি, তুমি মানুষকে বাড়িঘর থেকে ধরে এনে মাইরা হালাইবা আর তোমাকে সমর্থন করবো-তা হবে না।  আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, আদালত থেকে যেই রায় তা মেনে নিতে হবে। এই কারণে কাশু আমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।”

“চার খুনের মামলা থেকে স্থানীয় সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু তাকে বাঁচিয়ে দেবে বলেই তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। কোনও খুনি দল থেকে চলে গেলে বিএনপির কোনও ক্ষতি হবে না,” বলেন আঙ্গুর। 

এই বিষয়ে বাশার বলেন, “এমপি সাহেব (বাবু) আমাকে বলেছেন, মামলা যেভাবে আছে সেভাবেই চলবে। তিনি বাদী বা আসামি কোনও পক্ষ নেবেন না। আইনে যা হয়, তাই হবে বলে তিনি বলেছেন।”

চার খুনের মামলার বাদী শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০০২ সালের ১২ মার্চ পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সদাসদি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল বাশার ও তার সমর্থকদের হামলায় তার ছোট ভাই আওয়ামী লীগকর্মী বারেক, ফুফাতো ভাই বাদল, কবীর ও ফারুককে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়।

তখন বাশারকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫/৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন শফিক। পরে পুলিশ বাশারসহ ২৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।

মামলাটির বিচার চলছে নারায়ণগঞ্জের দুই নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। জেলার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কেএম ফজলুর রহমান বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এখন যুক্তিতর্ক শুনানি চলছে।

সে সময় নিজের দল ক্ষমতায় থাকলেও ওই মামলায় তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আসামি করা হয় বলে বলে দাবি করেন বাশার। 

আওয়ামী লীগে যোগদান অনুষ্ঠানে আবুল বাশার

তিনি বলেন, “ওই সময় আমি যাতে নির্বাচন করতে না পারি, সেজন্য আমার দলের (বিএনপির) লোকজনই আমাকে এই মামলায় জড়িয়েছে। মামলার রায় এখনও হয়নি এবং আমি দোষী সাব্যস্তও হইনি।”

গোপালদী পৌরসভার গত নির্বাচনে বিএনপি থেকে বাশারকে সমর্থন দেওয়া হয়েছিল, ভোটে তিনি হেরেছিলেন।

বাশার বলেন, এখন থেকে তার সমর্থকরা তার কথায় নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।

এই বিষয়ে আঙ্গুর বলেন, “তার যদি এত নেতাকর্মী থাকে, তাহলে তিনি পৌর নির্বাচনে হারলেন কেন? যেই ভোট তিনি পেয়েছেন, সেগুলো তার নয়, বিএনপির ভোট।”

আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সভাপতি বদরুজ্জামান খসরু বলেন, “বিএনপির অনেক ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে সে (বাশার)। তার দল ত্যাগ করায় দলের কিছু যায় আসে না।”

আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হত্যার মামলার আসামির যোগদান নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠলেও আড়াইহাজার উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজালাল মিয়া মনে করেন, বাশারের যোগদানে তার দলের ‘লাভ’ হয়েছে।

“মেয়র পদে হারলেও বিপুল ভোট পেয়েছিল। তার যোগ দেওয়ায় দলের লাভ ছাড়া ক্ষতি হয়নি।”

হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দলে ভেড়ানোয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে কি না- প্রশ্ন করা হলে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য বাবু বলেন, “সেটা দল বিবেচনা করবে।”