লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকেও বহিষ্কার

হজ নিয়ে মন্তব্যের পর মন্ত্রিত্ব ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর পদ হারানো আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল করে তাকে আওয়ামী লীগ থেকেও চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2014, 03:27 PM
Updated : 24 Oct 2014, 04:41 PM

শুক্রবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

তিনি বলেন, “লতিফ সিদ্দিকীকে কারণ দর্শাও নোটিস দেওয়া হয়েছিল। তিনি যে জবাব দিয়েছেন তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে তার প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল করে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

লতিফ সিদ্দিকী এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দলে আপিল করার সুযোগ পাবেন না বলেও জানান আওয়ামী লীগের মুখপাত্র।  

দল থেকে বাদ পড়ায় লতিফের সংসদ সদস্যপদ থাকছে কি-না এমন প্রশ্নে আশরাফ বলেন, “আমরা আমাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ইসিতে পাঠিয়ে দেব।” 

সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ অবশ্য এর আগে জানিয়েছিলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ‘ফ্লোর ক্রসিংয়ে’ না পড়ায় লতিফ সিদ্দিকী দল থেকে বাদ পড়লেও সাংসদ পদে থাকছেন।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রবাসে এক অনুষ্ঠানে হজ নিয়ে মন্তব্য করার পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘স্পষ্টভাষী ও আত্মম্ভরী’ হিসেবে পরিচিত ৭৭ বছর বয়সী লতিফকে নিয়ে বাংলাদেশে চলছিল তুমুল আলোচনা।

এরপর বিভিন্ন জেলায় এই রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা হয়েছে, জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। তার গ্রেপ্তার ও বিচার চেয়ে হরতালও ডেকেছে কয়েকটি ইসলামী দল।

এ পরিস্থিতিতে নিজের দলেই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে নির্বাচিত চার বারের এই সংসদ সদস্য। গত ১২ অক্টোবর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

ওইদিন লতিফ সিদ্দিকীর প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিতেরও সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। তাকে কেন চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে না- তা জানতে চেয়ে ১৪ অক্টোবর কারণ দর্শাও নোটিস পাঠানো হয়।

নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের অনুষ্ঠানে হজ নিয়ে যে বক্তব্য লতিফ সিদ্দিকী করেছেন- তা উল্লেখ করে নোটিসে বলা হয়, “আপনার এ বক্তব্য কেবল গর্হিত ও অনভিপ্রেতই নয়, বাংলাদেশ ও মুসলিম উম্মাহর প্রতি আঘাত স্বরূপ। তা আওয়ামী লীগের নীতিবিরোধী এবং আদর্শ ও গঠনতন্ত্রের সুস্পষ্ট লংঘন।”

কলকাতায় অবস্থানরত লতিফ সেখান থেকেই নিজের জবাব পাঠিয়ে দেন, যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। 

শেষ রক্ষা যে হবে না আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাতেই তার ইংগিত মিলেছিল। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, “উনি (লতিফ) যেটা বলেছেন তার খেসারত উনাকেই দিতে হবে।”

শুক্রবার শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হলো।

আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা লতিফ ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকারে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে পাঁচ বছর তা পালন করেন। এবার পেয়েছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। কিন্তু এক বছর না পেরোতেই তাকে বিদায় নিতে হয়।

লতিফকে সভাপতিমণ্ডলীর পদ থেকে বাদ দেওয়ারে ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের ৪৬ ‘ক’ অনুচ্ছেদের কথা বলেছে আওয়ামী লীগ।

ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “কোনো সদস্য আওয়ামী লীগের আদর্শ, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, গঠনতন্ত্র ও নিয়মাবলী বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের পরিপন্থি কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করিলে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কাউন্সিল, কার্যনির্বাহী সংসদ, সংসদীয় বোর্ড বা সংসদীয় পার্টির বিরুদ্ধে কোনো কাজ করিলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ তাহার বিরুদ্ধে যে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।”

আর তাকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে গঠনতন্ত্রের ৪৬ ‘ঞ’ অনুচ্ছেদ অনুসারে।

এতে বলা হয়েছে, “সংগঠনের যে কোনো শাখা তাহার যে কোনো কর্মকর্তা বা সদস্যকে দলের স্বার্থ, আদর্শ, শৃঙ্খলা তথা গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের জন্য স্ব-স্ব পদ বা দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবে। তবে এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন শাখার অনুমোদন প্রয়োজন হইবে এবং এইক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শাখার সাধারণ সভায় দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হইবে। ঊর্ধ্বতন শাখা পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে তাহার সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট শাখাকে জানাইবে, অন্যথায় সিদ্ধান্তের সহিত একমত বলিয়া গণ্য হইবে।”

টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সিদ্দিকী পরিবারের অন্যতম সদস্য আব্দুল কাদের সিদ্দিকী দল ছাড়েন প্রায় দুই দশক আগে, এখন তার বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীও বাদ পড়লেন।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর লতিফ সিদ্দিকী নিউ ইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির এক অনুষ্ঠানে হজ নিয়ে কথা বলেন।

নিজেকে ‘অহংকারী’ উল্লেখ করেই লতিফ সিদ্দিকী বলেছিলেন, “আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাত দুটোর ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীর যতটা বিরোধী, তার চেয়ে বেশি হজ আর তাবলিগের বিরোধী।”