প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ‘শিষ্টাচারবহির্ভূত’: বিএনপি

সংলাপ ও নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ‘গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারবহির্ভূত’ এবং তার ভাষাকে ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের ভাষা’ আখ্যায়িত করেছে বিএনপি।  

প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2014, 02:18 PM
Updated : 24 Oct 2014, 02:18 PM

শুক্রবার বিকালে গুলশানে দলে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “গতকাল (বৃহস্পতিবার) সংবাদ সম্মেলনে সংলাপ ও নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যে কথা বলেছেন, তা গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারবর্হিভূত। তার ওই ভাষা একদলীয় ফ্যাসিস্ট সরকারের ভাষা।

“আমরা মনে করি, দেশ এক গভীর রাজনৈতিক সংকটে নিপতিত। এটা প্রধানমন্ত্রী মানতে চান না। সেজন্য উনি সংলাপ চান না। উনি কি বললেন না বললেন, তা বড় কথা নয়। দেশের জনগণ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়- এই আসল সত্যটি প্রধানমন্ত্রী এড়িয়ে যেতে চান। এটা কোনোভাবে গণতন্ত্র হতে পারে না।’’

সাম্প্রতিক ইতালি সফর নিয়ে বৃহস্পতিবার গণভবনে পূর্বঘোষিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংলাপ নিয়ে আর প্রশ্ন না করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন,“বারবার খুনিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে এতো তাগিদ কেন? যারা রাজনীতির আস্তাকুড়ে চলে গেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা কেন?”

তবে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, নীলফামারীতে ২০ দলীয় জোটের পূর্বঘোষিত জনসভায় খালেদা জিয়ার বক্তব্যের গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার ঠেকাতেই একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করেন।

তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, নীলফামারীতে আমাদের নেত্রীর বক্তব্য যাতে গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণের কাছে প্রচারিত না হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একই সময়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন।

“এর মাধ্যমে তার হীন মানসিকতার পরিচয় ফুটে উঠেছে। আমরা এহেন কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছি।’’

গত ২৭ সেপ্টেম্বর জামালপুরে ২০ দলীয় জোটের জনসভার দিনও প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন ডেকে খালেদা জিয়ার সংবাদ প্রচারে বাধা দিয়েছিলেন অভিযোগ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।

পাঁচত্তর সালে ১৫ আগস্টের ঘটনাবলীর সঙ্গে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়াকে সম্পৃক্ত করে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের নিন্দা জানান তিনি।

ফখরুল বলেন, “ এটা প্রমাণিত সত্য, ১৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা খোন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে তার দলের লোকজনই জড়িত। ওই পটপরির্তনের পর মুশতাকের মন্ত্রিপরিষদের আওয়ামী লীগের নেতারাই মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেছিলেন। আমরা বলতে চাই, এভাবে মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেই।’’

২১ আগস্টে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলায় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেরও প্রতিবাদ জানান তিনি।

“তারেক রহমানকে পরিকল্পিতভাবে চতুর্থ দফা তদন্তের মাধ্যমে এই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এফআইআর, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তদন্তেরও তার নাম আসেনি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী চান না এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। তিনি রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে বিচারিক মামলায় প্রভাব বিস্তার করতে এভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন।’’

হরতাল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ অভিহিত করে তিনি বলেন, “জিয়া চ্যারিটেবিল ট্রাস্ট নামে দুটি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে। এর কোনো ভিত্তি নেই। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেত্রীকে হয়রানি ও রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই ওই দুইটি মামলা দেয়া হয়েছে। ওই মামলার হাজিরার দিন ২৬ অক্টোবর আমরা কোনো হরতাল ডাকিনি। এটি ইসলামী দলসমূহের হরতাল। বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আমরা একদিন হরতাল দিয়েছি মাত্র।”

আওয়ামী লীগ সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, এই অবৈধ সরকার রাজনৈতিকভাবে এতোই দেউলিয়া হয়ে গেছে যে তারা এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় টিকে আছে।

“আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, দেশের মানুষ অবৈধ সরকারকে মেনে নেয়নি। তারা অবিলম্বে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। আওয়ামী লীগ যত তাড়াতাড়ি এটি অনুধাবন করবে ততই মঙ্গল।”

অন্যথায় দেশ আবারো অস্থিতিশীল অবস্থায় চলে যাবে বলে হুশিয়ারি দেন তিনি।

আন্দোলন সর্ম্পকে ফখরুল বলেন, “আমরা সহিংসতা চাই না। আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমাদের আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের বিভিন্ন স্তর আছে। জনসভা করে আমরা গণসম্পৃক্ততার কাজটি করছি। নির্বাচন না দিলে আন্দোলনে আমরা এই সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করবো।”

সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন উপস্থিত ছিলেন।