গোলাম আযমের মৃত্যু ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক’: জামায়াত

শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে দল জামায়াতে ইসলামী বলেছে, ‘মিথ্যা মামলায়’ আটক থাকা অবস্থায় ‘পরিবারের সান্নিধ্য থেকে ও উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত’ অবস্থায় তার এই মৃত্যু ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2014, 12:50 PM
Updated : 24 Oct 2014, 04:36 PM

দলটির ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান শুক্রবার এক শোকবার্তায় গোলাম আযমের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

জামায়াতের তাত্ত্বিক গুরু গোলাম আযমকে এই শোকবার্তায় ‘ভাষা সৈনিক’; ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার রূপকার’; ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মহান নেতা’; ‘বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের নন্দিত ব্যক্তিত্ব’- এমন সব বিশেষণে অভিহিত করা হয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তার বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকা নিয়ে কিছু বলা হয়নি।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ৯০ বছরের সাজা ভোগের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৯২ বছর বয়সী গোলাম আযম।

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজা প্রাপ্য হলেও গতবছরের ১৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। এরপর থেকে তিনি হাসপাতালেই ছিলেন। 

মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনাকারী মূল ব্যক্তি হিসাবে চিহ্নিত করে জামায়াতের তখনকার আমিরকে ওই দণ্ড দেয় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

গত বছরের ১৫ জুলাই ওই রায়ে বিচারক বলেছিলেন, আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি পাওনা হলেও বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তাকে ৯০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হল।

বিচারাধীন অবস্থা থেকে হাসপাতালে প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন গোলাম আযম, জীবদ্দশায় যিনি একাত্তরের বাঙালিদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য কখনও ক্ষমা কিংবা দুঃখ প্রকাশ করেননি। 

জামায়াতের শোকবার্তায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘জালেম’ আখ্যায়িত করে বলা হয়, “এ জালেম সরকারের মিথ্যা মামলায় আটক থাকা অবস্থায় জীবনের শেষ প্রান্তে পরিবারের সান্নিধ্য থেকে ও উন্নত চিকিৎসা বঞ্চিত অবস্থায় তার এই মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের জনগণ ও সমগ্র মুসলিম বিশ্ব গভীরভাবে শোকাহত।”

তারুণ্যে পাকিস্তানের সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদীর আদর্শে প্রভাবিত হয়ে জামায়াতের রাজনীতিতে আসা গোলাম আযম বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের কাছে সব সময় একজন ‘ঘৃণিত ব্যক্তি’ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে এসেছেন। তবে জামায়াতের শোকবার্তায় তাকে ‘এদেশের  রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব’ বলে দাবি করা হয়েছে।

“১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং বাংলাদেশে একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতির রূপকার হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন।”

জামায়াতের শোকবার্তায় আগের মতোই গোলাম আযমকে একজন ‘ভাষা সৈনিক’ হিসাবে দেখানোর চেষ্টা চালানো হয়েছে।

তার ভূমিকা ‘জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে’ দাবি করে এতে বলা হয়েছে, “তিনি ১৯৪৮ সালের ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবীতে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছে ঐতিহাসিক স্মারকলিপি উপস্থাপন করেন। ভাষা আন্দোলনের কারণে তদানীন্তন সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় গত শতকের ’৪০ এর দশকে এক মেয়াদে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হয়েছিলেন গোলাম আযম। ওই সময় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে জিএস হিসেবে তার একটি স্মারকলিপি দেওয়াকেই ‘ভাষা আন্দোলনে তার ভূমিকা’ হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস চালায় তার দল জামায়াতে ইসলামী; যদিও পরে তিনি নিজেই তার ওই পদক্ষেপ ভুল ছিল বলে উল্লেখ করেন।

জামায়াত বলছে, গোলাম আযম “সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বহুবার কারাবরণ করেছেন। অন্তত ৫ বার বিভিন্ন সময়ে তাকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অপরাধে কারাবরণ করতে হয়েছে।”

তবে মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে বাংলাদেশ ছাড়ার পর ৭ বছর লন্ডনে অবস্থান করে ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের আমলে পাকিস্তানি পাসপোর্টে গোলাম আযমের ফেরা এবং ১৯৮১ সালে বায়তুল মোকাররমে একটি জানাজা পড়তে গিয়ে জুতাপেটার শিকার হওয়ার ঘটনা নিয়ে কিছু উল্লেখ করেনি জামায়াত।