‘একটা মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক ’  

বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আন্দোলনের নামে’ আবারো ‘হত্যা-অরাজকতা’ চললে সরকারকে কঠোর ভূমিকায় দেখতে হবে।  

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2014, 12:32 PM
Updated : 23 Oct 2014, 03:13 PM

তিনি বলেছেন, ‘দু-চারটা মানুষ মারার’ নাম আন্দোলন নয়। আন্দোলনের নামে সহিংসতা হলে তা প্রতিহত করতে জনগণের প্রতিও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার আন্দোলনের হুমকির জবাবে তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে ট্রানজিট পিরিয়ডে ছিলাম। ইন্টেরিম গভার্নমেন্ট হিসাবে ছিলাম। তখন যা করতে পেরেছিল, এখন তা পারবে না। এটুকু দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই। এখন আমার দেশের একটা মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক।

“আর একটা মানুষের ক্ষতি করে দেখুক; তার পরিণতি কি হবে সেটাও তারা দেখবে।”

সংলাপ নিয়ে আর প্রশ্ন না করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন,“বারবার খুনিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে এতো তাগিদ কেন? যারা রাজনীতির আস্তাকুড়ে চলে গেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা কেন?”

সাম্প্রতিক ইতালি সফর নিয়ে বৃহস্পতিবার গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রতিক্রিয়া।

এই সংবাদ সম্মেলনের ঘণ্টাখানেক আগে নীলফামারীতে এক জনসভায় আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোর হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

নির্দলীয় সরকারের দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, “সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি প্রচার মাধ্যমের এক সাংবাদিকের প্রশ্নে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি একেবারেই নাকচ করে দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা।

তিনি বলেন, “কেউ যদি আপনাকে খুন করতে আসে আর বলি, আলোচনা করে সমাধান করেন, করবেন?”

জিয়াউর রহমান সামরিক আইন জারি করে ক্ষমতা গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে চাকরি দেওয়া এবং ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের সাংসদ করার কথাও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।

“২১ অগাস্ট? কে জড়িত? খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান জড়িত”, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

ওই প্রশ্ন কর্তার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা হত্যাকারী। তাদের সাথে বসাতে এতো আগ্রহ কেন?

“কাটা ঘায়ে খোঁচা দিয়েন না। দেশের জন্য অনেক সহ্য করেছি। কি দিয়েছে বিএনপি? যারা এদেশে গণতন্ত্র চায় না- তাদের জন্য এতো দরদ কেন? বারবার খুনীদের সঙ্গে বসানোর জন্য এতো আকুলি বিকুলি কেন?”

শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে পরিষ্কার বলে দিলাম… যারা রাজনীতির আস্তাকুড়ে চলে গেছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা কিসের?”

খালেদা জিয়ার আন্দোলনের ঘোষণার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নস্যাৎ করতেই আন্দোলনের ঘোষণা দিচ্ছেন।”

শান্তির ভয়ে খালেদা জিয়া ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ মামলায় হাজিরা দিতে চান না বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “মামলার তারিখ আসলেই হুমকি-ধামকি দেন।

“উনি (খালেদা জিয়া) এতিমদের টাকা মেরে খেয়েছেন। উনি জানেন, উনি যা করেছেন- তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্যই হরতাল দিয়ে দিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে চান।”

আওয়ামী লীগে লতিফ সিদ্দিকীর প্রাথমিক সদস্যপদ থাকবে কি না- সে বিষয়ে শনিবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে জানিয়ে শেখ হাসি না বলেন, “লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই নাই- এটা ঠিক না।”

নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে হজ নিয়ে মন্তব্যের পর লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী থেকে বাদ দেওয়া হয়।

এ বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা সরকারে আছি। আমাদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হয়।”

লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে কয়েকটি ইসলামী দলের ডাকা রোববারের হরতাল ‘অযৌক্তিক’ বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।

“সে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে। যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়েছি। হরতালের কোনো যৌক্তিকতা নেই।”

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একটি জেলায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় কথিত বাংলাদেশিদের জড়িয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শেখ হাসিনা বলেন, “আর, যাই হোক- আমাদের সম্পর্ক থাকতে পারে না। যাদের সঙ্গে জামায়াতের সুসম্পর্ক- তারাই সম্পৃক্ত থাকতে পারে।”

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অব্যাহত থাকবে বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।   

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান সরকার বিশ্ববাসীর কাছেও স্বীকৃতি পায়নি বলে খালেদা জিয়া দাবি করলেও সরকার প্রধান বলেন, ইতালিত অনুষ্ঠিত আসেম সম্মেলনে এ বিষয়ে তাকে কোনো ‘প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি’।

“সেখানে অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথেই দেখা হয়েছে। তারা সকলেই দ্বিতীয় বার সরকার গঠনের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে কিন্তু কেউ প্রশ্ন তোলেনি।”

নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ যেভাবে ‘উন্নয়নের পথে এগিয়েছে’, তাতে সবার অভিনন্দন পেয়েছেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

৫ জানুয়রির নির্বাচন ঠেকাতে আন্দোলন করা বিএনপির প্রতি ইংগিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিরোধী দল সংসদে স্থীতিশীলতা বজায় রেখেছে। আর যে দল নির্বাচনে আসেনি তাদের নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই, দেশে রাজনৈতিক স্থীতিশীলতা রয়েছে এটার প্রসংশা সকলে করেছেন।”

তিনি বলেন, দেশে বিদেশে যারা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ সমালোচনা করেছে, কমনওয়েলথ পার্লমেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নে বাংলাদেশের জয়ের পর তাদের ‘দূরদর্শীতার অভাবই’ প্রমাণিত হয়েছে।

“নির্বাচনের পরে অনেক দেশের প্রতিনিধি প্রশ্ন তুলেছিলেন, সম্মেলনে সেই সব দেশের প্রধানরাই অভিনন্দন জানিয়েছেন।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আসেম সম্মেলনের বিভিন্ন বৈঠকে তিনি ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জঙ্গিদের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ হলেই জঙ্গিবাদের সম্প্রসারণ বন্ধ হবে।

মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর এই সংবাদ সম্মেলন জাতীয় গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।