ভাংচুর-মারামারির পর ফখরুলের বৈঠক, আপাত শান্ত ছাত্রদল

দিনভর মারামারি ও ভাংচুরের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হস্তক্ষেপে আপাত শান্ত হয়েছে সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2014, 03:12 PM
Updated : 19 Oct 2014, 03:19 PM

ছাত্রদলে পদ না পাওয়াদের গত তিন দিন ধরে বিক্ষোভের মধ্যে রোববার নতুন কমিটির সদস্যরা নয়া পল্টনে কার্যালয়ে গেলে মারামারি বেঁধে যায়। এই সময় ভাংচুরের হাত থেকে রক্ষা পায়নি জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্যও।

এরপর বিকালে মির্জা ফখরুল বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কথা দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে তুলে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

এরপর বিক্ষুব্ধদের অন্যতম নেতা কাজী রওনাকুল ইসলাম রিয়াজ কার্যালয়ের নিচে এসে ঘোষণা দেন,  খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলে সোমবার সিদ্ধান্ত জানানোর প্রতিশ্রুতি তাদের দেওয়া হয়েছে।

ওই সময় পর্যন্ত বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন তিনি, যা গত ১৪ অক্টোবর থেকে চালিয়ে আসছিলেন তারা।

গত ১৪ অক্টোবর খালেদা জিয়া অনুমোদিত নতুন কমিটিতে কাজী রিয়াজ যুগ্ম সম্পাদকের পদ পেলেও এই কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভে তিনিও শামিল রয়েছন।

ফখরুলের সঙ্গে বৈঠকে কাজী রিয়াজের পাশাপাশি আরও ছিলেন- গত কমিটির নেতা তরিকুল ইসলাম টিটু, মশিউর রহমান মিশু, শামসুজ্জোহা সুমন, হাবিবুর রহমান ও রাকিবুল ইসলাম রয়েল।

বৈঠকে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রুহুল কবির রিজভী, সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল এবং যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও ছিলেন।

বিএনপি ভবনের তৃতীয় তলায় নিজের চেম্বারে ফখরুল যখন বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন, তখন নতুন কমিটির নেতারা চতুর্থ তলায় সংগঠনের কার্যালয়ে ছিলেন।

শনিবার বিক্ষুব্ধরা ওই কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল। একদিন বাদে নতুন কমিটির নেতারা সেই তালা ভেঙে ঢোকার সময় মারামারি বাঁধে।

বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করে বেরিয়ে ফখরুল নতুন কমিটির নেতাদের ‘চুপ’ থাকার নির্দেশ দেন। সন্ধ্যায় তিনি নতুন কমিটির নেতাদের নিয়ে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান।

বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যনি ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে। ছাত্রদলের সাবেক এই দুই সভাপতির কুশপুতুলও শনিবার পোড়ায় তারা।

খালেদা জিয়া ছাত্রদলের নতুন কমিটি অনুমোদনের পরদিন বৃহস্পতিবারই নয়া পল্টনে বিক্ষোভ হয়, সেখানে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণও ঘটানো হয়।

এরপর সেদিন রাতে নতুন কমিটির নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে তার গুলশানের কার্যালয়ে গেলে সেখানেও কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।  

এরপর শুক্রবার নয়া পল্টনে দিনভর বিক্ষোভ করে পদ না পাওয়া নেতা-কর্মীরা। শনিবার তাদের সমাবেশের সময় বিএনপির কয়েকজন নেতা কার্যালয়ে ঢোকার পথে রোষের মুখে পড়েন।

শনিবার ফখরুলকেও আটকেছিল বিক্ষুব্ধরা। তখন  ‘দেখবেন’ বলে তাদের শান্ত করে কার্যালয়ে ঢুকেছিলেন ফখরুল।

হামলা-ভাংচুর

রোববার সকালে তালা ভেঙে সংগঠনের কার্যালয়ের ভেতরে নতুন কমিটির নেতারা ঢোকার পর দুপুরে বিক্ষুব্ধরা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালায়।  

বেলা ২টার দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে কয়েকশ’ কর্মী ছাত্রদল নেতা-কর্মী কার্যালয়ে হামলা চালায়, তারা ইট ছুড়তে থাকে। এ সময় দুটি হাতবোমাও বিস্ফোরিত হয়।

হামলায় অন্তত তিনজন আহত হন। হামলার পর দেখা যায়, ভবনের নিচ তলায় জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্যঘেরা কাচের বেষ্টনি ভাঙা, ভাস্কর্যের ডান হাতের কাছে সাদা রঙও উঠে গেছে। থাই অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি প্রাচীরটির বিভিন্ন অংশ ফুটপাতে পড়ে ছিল।

১৯৯৫ সালের দিকে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভবনের প্রধান ফটকের সামনেই কাচ দিয়ে ঘেরা জিয়াউর রহমানের সাদা রঙের এই ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছিল।

হামলার পর নতুন কমিটির সমর্থক নেতা-কর্মীরা ছুটাছুটি শুরু করেন। অনেকে হুড়োহুড়ি করে দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েন।

বিক্ষিপ্তভাবে কার্যালয়ে ইট ছোড়ার পাশাপাশি কয়েকজনকে মারধর করতেও দেখা যায়। পরে কার্যালয় থেকে আহত তিনজনকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

হামলার সময় মির্জা ফখরুল, রিজভী ও  সোহেলসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা কার্যালয়ের ভেতরেই ছিলেন।

ছাত্রদলের দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানকে কেন্দ্র করে নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের কাছাকাছি পুলিশ ও সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বহু সদস্যকে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেলেও দুপুরে হামলা চালানোর সময় তাদের কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি।