আন্দোলন হবে, প্রস্তুতি নিন: খালেদা

সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, যাতে ডাক দিলেই সাড়া পাওয়া যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2014, 05:44 PM
Updated : 18 Oct 2014, 05:47 PM

নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে ঈদের পর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া বিএনপি নেত্রী শনিবার রাতে তার গুলশানের কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এই আহ্বান জানান।

খালেদা বলেন, “ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা আগামীতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে করব। সারাদেশের জনগণকে জাগিয়ে তুলন, ঐক্যবদ্ধ করুন।। আমি যখনই আন্দোলনের ডাক দেব, তখনই যাতে জনগণ মাঠে নেমে আসতে পারে।”

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর খালেদা রাজপথে নামার কথা বলে এলেও বিএনপির আন্দোলনের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।

সেই সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি নির্বাচনের জন্য আরও পাঁচ বছর অপেক্ষা করতেও বলে আসছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেন, “আন্দোলনে বাধা দিলে তার পরিণতি শুভ হবে না। আমরা অনেক সহ্য করছি। আগামীতে আর সহ্য করা হবে না। তারা (সরকার) যেভাবে আচরণ করবে, সেভাবেই জবাব দেওয়া হবে।”

মতবিনিময় সভায় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের ১৪টি রাজনৈতিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ৩০ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ২৭ জন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ১৮ জন পৌর মেয়র অংশ নেন।

তৃণমূলে দলের সাংগঠনিক অবস্থা জানতে জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বসলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

বক্তব্যের শুরুতে খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের ‘দুনীতি ও অপশাসনের’ চিত্র তুলে ধরে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল দাবি করে তিনি বলেন, “১৯৮৬ সালে নির্বাচনের সময়ে দলের বয়স্ক নেতারা বলেছিলেন, ভোটে না গেলে বিএনপি মুসলিম লীগ হয়ে যাবে।

“কিন্তু আমরা এরশাদের অধীনে সেই নির্বাচনে যাইনি। এরপর ১৯৯১ সালে নির্বাচনে বিএনপিকে জনগণ নির্বাচিত করেছিল। এবারও আমরা সঠিক পথে আছি। আমরা আবার বিজয়ী হব।”

সরকার গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা এবং গুম ও হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা।

“আমি এজেন্সিদের উদ্দেশে বলব, এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করুন। এসব কাজ আপনাদের নয়। আওয়ামী লীগই চিরস্থায়ী সরকার নয়, তাদের বিদায় নিতে হবে। তখন আপনাদের ওইসব কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।”

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আওয়ামী লীগ আজ খুন-গুম-জুলুম করেও সুফী হয়েছে। তারা একের পর এক মিথ্যাচার করছে। তাদের কথার জবাব দিলে আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।”

নারায়ণগঞ্জের সাত খুন নিয়ে র‌্যাবের সমালোচনা করেন তিনি।

সরকারের অদক্ষতায় শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে বলে দাবি করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা। স্বাস্থ্যখাত, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিচার বিভাগসহ সবক্ষেত্রে দুনীতি হচ্ছে বলেও তার অভিযোগ।

দুনীতি দমন কমিশন সরকারের মন্ত্রীদের দায়মুক্তি দিচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যখাতকে ধ্বংস করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। তাকে দুদক দায়মুক্তি দিয়েছে। এভাবে মন্ত্রীদের তারা (দুদক) দায়মুক্তি দিচ্ছে।

“আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, দুনীতির কারণে কাউকে দায়মুক্তি দেওয়া হবে না। যারাই দায়মুক্তি পাচ্ছে, তাদের একদিন আইনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।”

মতবিনিময় সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এম কে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, এম মোরশেদ খান, শওকত মাহমুদ, বরকত উল্লাহ বুলু, মাহবুব উদ্দিন খোকন, মো. শাহজাহান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, গোলাম আকবর খন্দকার, এসএম ফজলুল হক উপস্থিত ছিলেন।

জেলা নেতাদের মধ্যে ছিলেন জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, আসলাম চৌধুরী, শাহজাহান চৌধুরী, আবদুল ওয়াদুদ ভুঁইয়া, হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, আনোয়ারুল আজীম, আখতারুজ্জামান সরকার, মোস্তাক মিয়া, শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, আবু তাহের, হারুনুর রশীদ আজাদ, আবু ইউসুফ চৌধুরী, দীপেন দেওয়ান, শফিকুল ইসলাম, মোসলেম উদ্দিন, আবু আফিস আহমেদ, আজিজুর রহমান, রুহুল আমিন, সালাহউদ্দিন সরকার, মাহবুবুল আলম চৌধুরী, এটিএম মিজানুর রহমান, আবদুল খালেক, ইলিয়াস পাটোয়ারি, দেওয়ান মো. শফিকুজ্জামান, দেলোয়ার হোসেন নিয়াজী, আনোয়ারুল হক কামাল, আবুল কালাম আজাদ,  মোজাফফর আহমেদ, নুরুল আমিন চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম ভুঁইয়া, আব্দুল কুদ্দুস, মোস্তফা কামাল, হুমায়ুন কবির প্রধান, মোহছেনা বেগম, তাহমিনা আখতার পপি, সুফিয়া বেগম, দিলারা শিরিন, শেফালী বেগম, অংগ্যকু চাই মারমা, ফরিদা ইয়াসমীন, লুৎফা হায়দার মনি, শাহানা বেগম, আফরোজা বেগম, নাসিমা কামরুল, রন বিকাশ চাকমা, মো. আলমগীর হোসেন, সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম হায়দার, হুমায়ুন কবির প্রধান, আবদুস সাত্তার, জামাল উদ্দিন, জাবেদ রেজা, আমির হোসেন, মাইনুদ্দিন মাইনু, জসিম উদ্দিন পাটোয়ারি, মোতাহার হোসেন, এ বি এম জিলানী, আবু ইউসুফ চৌধুরী, মুহাম্মদ ইলিয়াস প্রমুখ।