ছাত্রদল কার্যালয়ে ‘বিদ্রোহীদের’ তালা

নতুন কমিটি ভেঙে দেওয়ার দাবিতে নয়া পল্টনে সংগঠনের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দুই নেতার কুশপুতুল পুড়িয়েছে ছাত্রদলের এক দল নেতা-কর্মী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2014, 10:40 AM
Updated : 18 Oct 2014, 02:28 PM

গত ১৪ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাত্রদলের নতুন কমিটি অনুমোদনের পর থেকে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছিল।

এর ধারাবাহিকতায় পদ না পাওয়া কয়েকশ’ নেতা-কর্মী শনিবার নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকে। তারা সমাবেশ করে কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।

সমাবেশে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, গত কমিটির সহসভাপতি আবু সাঈদ, জাবেদ হাসান স্বাধীন, তরুণ দে, রাজু তালুকদার, কামাল আনোয়ার আহমেদ, গত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ফেরদৌস মুন্না, তরিকুল ইসলাম টিটু, গত কমিটির সহ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রয়েল, আবদুল মুকিত লিংকন, গত কমিটির সদস্য এস এম মোশাররফ হোসেন মিশু, রবিউল হাসান সবুজ ছিলেন।

নতুন কমিটির সহসভাপতি সাদীউল কবির নিরব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী রিয়াজসহ আরো কয়েকজনকে ‘বিদ্রোহীদের’ এই সমাবেশে দেখা গেছে।

রাকিবুল ইসলাম রয়েল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ছাত্রদলের শক্তিশালী কমিটি চাই। যে কমিটি করা হয়েছে, তা ভাঙতে হবে। এটা আমরা মানি না।”

সমাবেশের পর দুপুর দেড়টার দিকে ভবনের চতুর্থ তলায় অবস্থিত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে  তালা লাগিয়ে দেয় তারা। বিক্ষুব্ধরা কার্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে নতুন কমিটির কেউ যাতে অফিসে ঢুকতে না পারে সেজন্য পাহারাও বসিয়েছে।

নতুন কমিটির এক নেতা কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে তাকে ধাওয়া দেয় বিক্ষুব্ধরা। ধাওয়া খেয়ে ওই নেতাকে একটি গলি দিয়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। 

বিক্ষুব্ধদের একটি অংশ লাঠি নিয়ে নয়া পল্টনে অবস্থান করে। তারা নয়া পল্টন সড়কের দুই পাশে গলিতেও পাহারা বসায়।

বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থাকা পুলিশ এর মধ্যে নীরব ভূমিকা পালন করছিল। অন্যসময় নয়া পল্টনে দুই-তিনজনের বেশি কর্মীকে জড়ো হতে দিত না ‍পুলিশ।

শুক্রবার নয়া পল্টনে বিক্ষোভের চিত্র

দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের এক স্মরণ সভা শেষ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া পল্টনে এলে তার গাড়ি ঘিরে বিক্ষুব্ধরা।

এ সময় তারা কমিটি বাতিলের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। পরে ফখরুল বিষয়টি ‘দেখবেন’ বলে তাদের আশ্বস্ত করেন।

এরপরই দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ এলে তাকেও ঘেরাও করে বিক্ষুব্ধরা। ওই সময়ে দূরে অবস্থানরত কিছু ছাত্রদলকর্মী ‘দালাল-দালাল’ বলে চিৎকার করে।  সালাহউদ্দিন দ্রুত কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন।

এরপর বেলা ৩টার দিকে কার্যালয়ের সামনে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি এবং সহ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর কুশপুতুল পোড়ায় বিক্ষুব্ধরা।

বিক্ষুব্ধদের দাবি, সংগঠনের সাবেক দুই সভাপতি এ্যানি ও টুকুর ইচ্ছায় নতুন কমিটি গঠন করেছে।  

অন্যদিকে নতুন কমিটির অনেক নেতার অভিযোগ, নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর নেতা ইসহাক সরকারের ইন্ধনে এই আন্দোলন হচ্ছে।

ইসহাক ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। পিন্টু বর্তমানে কারাবন্দি।

দুই বছর মেয়াদী কমিটি বিলুপ্ত করে রাজিব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১ সদস্যের নতুন কমিটি অনুমোদন দেন খালেদা।

কমিটি গঠনের পরদিনই নয়া পল্টনে বিক্ষোভ দেখায় পদ না পাওয়ারা। সেখানে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণও ঘটানো হয়। সেদিন নতুন কমিটির নেতারা খালেদার সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেখানেও হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে।

এর পরদিন শুক্রবার পদ না পাওয়ারা নয়া পল্টনের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখায়।