যুক্তরাষ্ট্রে বিতর্কিত মন্তব্যের পর এখন কলকাতায় অবস্থান করা প্রবীণ এই রাজনীতিক সোমবার টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ভারত প্রতিনিধিকে বলেছেন, তিনি দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন, এখনই ফিরে আরো বিব্রতকর অবস্থার দিকে ঠেলে দিতে চান না।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কলকাতায় থাকার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন ৭৭ বছর বয়সী এই রাজনীতিক।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লতিফ সিদ্দিকী ‘রেগুলার ভিসা’য় বর্তমানে কলকাতায় রয়েছেন। চিকিৎসাও করাতে পারেন তিনি।
নিরাপত্তাজনিত কারণে বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আলোচিত এই রাজনীতিককের আবাসস্থল প্রকাশ করতে চান না কর্মকর্তারা।
নিউ ইয়র্কে যে মন্তব্যের জন্য লতিফ সিদ্দিকীকে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে, তার জন্য কোনো অনুশোচনা নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের পদ হারানো এই নেতা, যাকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়াও চলছে।
তবে দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও খেদ নেই তার। দলকে বিব্রতকর অবস্থার মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য অনুতাপ রয়েছে তার।
মন্ত্রিসভা ও দলীয় পদ থেকে বাদ পড়ার পরদিন সোমবার বিবিসি বাংলাকেও দীর্ঘ একটি সাক্ষাৎকারে এসব বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন লতিফ সিদ্দিকী।
সেখানে স্বভাবসুলভ ভঙ্গীতে ভাই আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর তার হয়ে ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই ব্যাটাকে আমার পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার কে (অধিকার) দিল? আমি তো তাকে এই দায়িত্ব দেই নাই যে আমার পক্ষে ক্ষমা চাও।”
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া লতিফ সিদ্দিকীর সাক্ষাৎকারের অনুলিখন
প্রশ্ন: মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ ও সভাপতিমণ্ডলী থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিক্রিয়া কী?
লতিফ সিদ্দিকী: আমি একটা দল করি, দলের একটা নিয়মশৃঙ্খলা রয়েছে, তা আমি ভঙ্গ করেছি বলে দল ও দলনেতা মনে করেছেন, দলটির সর্বোচ্চ ফোরামে বসে দলনেতা বহিষ্কারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেটা নিয়ে আমার কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা তো নয়। কারণ এই দলই আমাকে মন্ত্রিত্ব দিয়েছে, এখন আমার সহকর্মীরা মনে করছে আমি তাদের সহকর্মী হওয়ার যোগ্যতা রাখি না। সেইটা সংখ্যাগরিষ্ঠ গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে তো কোনও অপরাধ নয়।
প্রশ্ন: তাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে কি আপনি একমত?
লতিফ সিদ্দিকী: আমি একমত কারণ আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।
প্রশ্ন: আপনার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে বলে কি মনে করেন?
লতিফ সিদ্দিকী: না না, বরং আমি অনুতপ্ত যে আমি আমার দল ও দলনেতাকে একটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছি।
প্রশ্ন: পুরো অবস্থার জন্য কি অনুশোচনা হচ্ছে?
লতিফ সিদ্দিকী: না, আমার কোনও অনুশোচনা বা অনুতাপ নেই। আমার নেতাকে আমি বিব্রত করেছি, তিনি আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন, আমি তাকে খুব কষ্ট দিয়েছি।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনি যেটা বলেছিলেন, সেটা নিয়ে কি আপনার কোনও অনুশোচনা হচ্ছে?
প্রশ্ন: যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এখন আপনার পদক্ষেপ কী হবে? আপনি কি দেশে ফিরছেন?
লতিফ সিদ্দিকী: আমি দেশে ফিরতে আগ্রহী কারণ এই দেশটার স্বাধীনতার জন্য আমি কাজ করেছি। উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। কিন্তু প্রেক্ষাপটটা এমন হয়েছে যে আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। আমি কী করব, বুঝতে পারছি না। আমি দেশে ঢুকে গেলে আমার নেতা যদি আরও বিব্রত হয়, সেই কথা ভেবে আমি খুবই মানসিক সঙ্কটে আছি। আমি প্রথম সুযোগেই দেশে ঢুকে পড়ব।
প্রশ্ন: মানে আপনি এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না?
লতিফ সিদ্দিকী: বিষয়টা কিন্তু তা না। নেতা বা আমার দলের ক্ষতি হবে কি না, সেটা নিয়ে আমি চিন্তিত। আমাকে নিয়ে আমি কোনও চিন্তিত না।
প্রশ্ন: না ঢোকা পর্যন্ত তো সেটা বুঝতে পারছেন না?
লতিফ সিদ্দিকী: না না, বুঝতে না পারার তো কথা না, আমাকে তো কিছুটা জানাচ্ছে, জানতে তো আমি পারব।
প্রশ্ন: অর্থাৎ আপনি কি দলের কাছ থেকে কিছু জানার অপেক্ষায় আছেন, যে দল আপনাকে বলবে তুমি এস কিংবা এস না?
লতিফ সিদ্দিকী: অবশ্যই অবশ্যই।
প্রশ্ন: দলের নেতার সঙ্গে কি আপনি নিজে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন?
লতিফ সিদ্দিকী: দলের নেতা মানে শেখ হাসিনার সঙ্গে, না আমি চেষ্টা করি নাই।
প্রশ্ন: দলের কোনও পর্যায়ের সঙ্গে কি সেই চেষ্টা করেছেন যে আপনার কী করা উচিত, আপনি আসবেন কি না?
লতিফ সিদ্দিকী: না না।
প্রশ্ন: তো আপনি চাইছেন যে তারাই আপনাকে বলুক?
লতিফ সিদ্দিকী: আমি চাইছি না। তারা কী করবেন, সেটা তারাই সিদ্ধান্ত নিক।
প্রশ্ন: আমার দেখেছি দুজন লেখক তসলিমা নাসরীন ও দাউদ হায়দার তাদের সম্পর্কে এই একই ধরনের অভিযোগ ওঠার পরে তারা আর দেশেই ফিরতে পারছেন না, বছরের পর পর বছর, দশকের পর দশক । আপনার কি এই ভয়টা হচ্ছে যে আপনি আর দেশে ফিরতে পারবেন না?
লতিফ সিদ্দিকী: না না, তারা যা বলেছে তা লেখনীর মধ্যে বলেছে। তাদেরটা আর আমার ঘটনা তো এক নয়। আমার কথাগুলোকে বিকৃত ও খণ্ডিত করা হয়েছে। একত্রিত করে যোগ করলে আমি একটা অ্যাকাডেমিক ডিসকাশন করেছি।
প্রশ্ন: কিন্তু মানুষ, যেটা পারসেপশন মানুষের, আপনি ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দিয়েছেন? আপনার ভেতর কি এখন ভয় জাগছে, আপনি দেশে ফিরতে পারবেন কি না?
প্রশ্ন: যদি অদূর ভবিষ্যতে আপনি দেশে ফিরতে না পারেন, দল যদি আপনাকে সে ধরনের ইঙ্গিত না দেয় যে আপনি ফিরুন, আপনি এখনও এমপি আছেন... আপনি কোথায় থাকবেন? সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
লতিফ সিদ্দিকী: না না।
প্রশ্ন: আপনি কি ভারতেই থাকবেন?
লতিফ সিদ্দিকী: আমি ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে পারব না বলেই আমি কলকাতায় এসেছি। আমি একেবারেই মাটির সাথে থাকতে চাই, মাটি সোঁদা গন্ধের সাথে... সাধারণ মানুষ হয়ে।
প্রশ্ন: ভারতে থাকতে কি আপনি পারবেন? কোনও ইঙ্গিত ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন কি?
লতিফ সিদ্দিকী: না, ভারত থেকে না দিলে... এখনই আমি সেইটা নিয়ে আলোচনা করব না। সামনের সময়ই সেটা বলে দিবে।