প্রচলিত আইনে লতিফের শাস্তি চায় বিএনপি

কেবল মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ নয়, প্রচলিত আইনে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর শাস্তি দাবি করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2014, 09:03 AM
Updated : 2 Oct 2014, 09:48 AM

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রীর দায়িত্ব চালিয়ে আসা লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকেও সরিয়ে দেয়া হচ্ছে- আওয়ামী লীগের এমন ঘোষণার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “শুধু মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করলে এদেশের মানুষের ক্ষোভ যাবে না। জনগণ তার বিচার চায়।”

ফখরুল বলেন, হজ নিয়ে ‘বিরূপ মন্তব্য’ করে লতিফ সিদ্দিকী বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে’ আঘাত দিয়েছেন। এর ফলে সমাজে ‘বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতা’ সৃষ্টি হয়েছে।

“আমরা প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

লতিফ সিদ্দিকীর ‘আপত্তিকর’ বক্তব্যের প্রতিবাদে বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির বিক্ষোভে ‘পুলিশি হামলার’ প্রতিবাদে এই সংবাদ ব্রিফিং ডাকা হয়।

ফাইল ছবি

গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে স্থানীয় টাঙ্গাইল সমিতির এক অনুষ্ঠানে লতিফ বলেন, তিনি হজ আর তাবলিগ জামাতের ‘ঘোরতর বিরোধী’। তার মতে, এতে শ্রমশক্তির অপচয় হয়, উৎপাদনে প্রভাব পড়ে।

তার বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। দুই দিন দিনভর গুঞ্জন চলার পর বুধবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ জানান, ওই বক্তব্যের কারণে প্রধানমন্ত্রী  লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি দিয়েছেন।

এরপর বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত এক বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সাংবাদিকদের জানান, তাদের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকেও অব্যাহতি দেয়া হবে।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর শাস্তির দাবিতে সারাদেশ ফুঁসে উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। গতকাল যশোর, রাজশাহী, নাটোরের শান্তিপূর্ণ এসব কর্মসূচিতে পুলিশি হামলা চালানো হয়েছে। আমরা পুলিশের এহেন হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

এই বিএনপি নেতা বলেন, সরকার যে ‘ভিন্নমতকে সহ্য’ করতে পারে না, বিভিন্ন স্থানে মিছিল সমাবেশে ‘পুলিশি হামলাই’ তার প্রমাণ।

ঢাকায় কেবল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা-সমাবেশের অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “সরকার এমনিতেই ঢাকায় সমাবেশ করতে দেয় না। এখন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেছেন ঢাকার একটি জায়গায় সমাবেশ হবে। এটা কী তিনি বলতে পারেন?

“এর উদ্দেশ্য একটাই- জনগণের অধিকার হরণ করে দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করা।”

যশোরে বিএনপির কর্মসূচি থেকে জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক ও যুগ্ম স সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদসহ আট নেতাকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “যশোরে নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশ নারকীয় হামলা চালিয়েছে। লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে। যুবদল কর্মীকে পুলিশ বুকে গুলি করে আহত করেছে। মহিলা দলের কর্মীদের বেধড়ক পিটিয়েছে।”

যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের স্ত্রী সরকার দলীয় সংসদ সদস্য উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, “সেজন্য তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তার মতো আচরণ করেন না। ক্ষমতার দাপটে একজন দলীয় ক্যাডারের মতো তিনি আচরণ করেন বলে জেলার নেতারা আমাকে জানিয়েছেন।”

পুলিশ সুপারকে অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং যশোর, নাটোর, রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।

অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী আসাদুজ্জামান, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, আসাদুল করীম শাহিন, শিরিন সুলতানা, আবদুল সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু সংবাদ ব্রিফিঙে উপস্থিত ছিলেন।