লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগ চায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি

হজ, তাবলিগ জামাত ও প্রবাসের পত্রিকা নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করায় মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে সাতদিনের মধ্যে পদত্যাগ করে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি।

নিউইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2014, 10:00 AM
Updated : 1 Oct 2014, 05:11 AM

সোমবার সন্ধ্যায় আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও যুবদল টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে যুক্তরাষ্ট্রে অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করে।

এদিকে লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগও বলেছে, মন্ত্রীর ওই বক্তব্যের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।

জ্যাকসন হাইটসে ফুডকোর্ট পার্টি হলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি, যুক্তরাষ্ট্র যুবদল এবং ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

বিএনপি নেতা আব্দুল লতিফ সম্রাট, গিয়াস আহমেদ, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, হযরত আলী, যুবদলের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক এম এ বাতিন, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রদলের সভাপতি আতাউর রহমান আতা প্রমুখ এতে বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা সাত দিনের মধ্যে মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে বরখাস্ত করার দাবি জানান। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দূতাবাস ও কনস্যুলেট ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণের হুমকি দেন তারা।

এছাড়া প্রবাসের সাংবাদিকতা এবং টিভির টকশো উপস্থাপকদের সম্পর্কে লতিফ সিদ্দিকী যে ধরনের মন্তব্য করেছেন তার জন্য গণমাধ্যমের উচিত তাকে বয়কট করা বলেও মন্তব্য করেন তারা।

রোববার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রে টাঙ্গাইল জেলা সমিতির এক মতবিনিময় সমাবেশে মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, "আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামায়াতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ এবং তাবলিগ জামায়াতের বেশি বিরোধী।”

তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে বলেন, “কথায় কথায় আপনারা জয়কে টানেন কেন? 'জয় ভাই' কে? জয় বাংলাদেশ সরকারের কেউ নন। তিনি কোন সিদ্ধান্ত নেয়ারও কেউ নন।”

প্রবাসের সংবাদপত্রকে লতিফ সিদ্দিকী টয়লেট পেপার বলে অভিহিত করেন। টক শো-তে অংশগ্রহণকারীদের তিনি অশ্লীল ভাষায় গালি দেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা অধ্যাপক দেলুয়ার হোসেন, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক গোলাম ফারুক শাহীন এক বিবৃতিতে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্যে তার বিচার করা জরুরী বলে তারা উল্লেখ করেন।

এদিকে সোমবার রাতে জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের ব্যাখা দেয়।

এতে বলা হয়েছে, ‘পবিত্র হজ এবং তবলিগ সম্পর্কে তিনি যে মন্তব্য করেছেন তা মন্ত্রীর ব্যক্তিগত মতামত। মন্ত্রীর ওই বক্তব্যের সঙ্গে আওয়ামী লীগ একমত নয়।মন্ত্রীর বক্তব্য ধর্মপ্রাণ মানুষদের মনে আঘাত হেনেছে এবং তিনি যা বলেছেন তা একেবারেই অনাকাঙ্খিত।

জয় সম্পর্কে মন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয়, জয় ডিজিটাল বাংলাদেশের ‘স্বপ্নদ্রষ্টা’এটি সর্বজনবিদিত। প্রধানমন্ত্রীর আইটি উপদেষ্টা হিসেবে তিনি শুধু পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত, সবকিছুর বাস্তবায়ন করে থাকে সরকার। তারেক রহমানের মত সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ নন সজীব ওয়াজেদ জয়। তারেক রহমানের মত কোন সমান্তরাল সরকারও চালান না-মন্ত্রী মহোদয় হয়তো সেটিই বোঝাতে চেয়েছেন।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সেক্রেটারি সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ। এসময় তাদের পাশে ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, সহ সভাপতি আবুল কাশেম এবং লুৎফুল করিম, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের সভাপতি মিসবাহ আহমেদ এবং সেক্রেটারি ফরিদ আলম।

এক প্রশ্নের জবাবে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “লতিফ সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী নন, তিনি ভিন্ন অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন।”

মন্ত্রীর বক্তব্যে তারাও মর্মাহত এবং এ জন্যে নিন্দাও জানানো হয় করা হয় আওয়ামী লীগের এ অনুষ্ঠান থেকে।

এদিকে মন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রকাশের পর জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামী পৃথক বিবৃতিতে তাকে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করার দাবি জানিয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ওই বক্তব্য প্রত্যাহার এবং ক্ষমা প্রার্থনার জন্য লতিফ সিদ্দিকীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

আর হেফাজতে ইসলাম তাদের বিবৃতিতে ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছে, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তারা আন্দোলনের পথ বেছে নেবেন।