সাজেদার সঙ্গে হাছান মাহমুদের ‘বেয়াদবি’

প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদকে বেয়াদব বললেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2014, 12:08 PM
Updated : 28 Sept 2014, 12:08 PM

দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার জন্মদিনে রোববার দুপুরে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশে বক্তব্যের সময় অন্য সমাবেশ থেকে মাইকে হাছান মাহমুদের বক্তব্যের ‘যন্ত্রণায়’ এই বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা নয় দিনের সফরে দেশের বাইরে থাকায় আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী সাজেদা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন।

৩২ নম্বর সড়কের পশ্চিম পাশে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সমাবেশ চলাকালে পূর্ব পাশে মটরচালক লীগের সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন হাছান মাহমুদ।

একই সময়ে কাছাকাছি দুটি সমাবেশ চলায় একটির মাইকের শব্দ অন্যটিতে আসছিল, যাতে বিরক্তিভরা কণ্ঠে বক্তব্য শুরু করেন সংসদ উপনেতা সাজেদা।

এক পর্যায়ে সাজেদা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, “পাল্টাপাল্টি করা, বক্তব্য দেওয়া জামায়াতি হিসেব।…নতুন নেতারা প্রতিপক্ষ হিসেবে বক্তব্য দেবেন, এটা প্রথম দেখলাম। এটা স্মরণকালের বৃহত্তম বেয়াদবি।”

অন্য সমাবেশের মাইকে ভেসে আসা হাছানের কণ্ঠ শুনে সাজেদা বলতে থাকেন, “এখন বাহাস করতেছেন, যা হোক আমি কিছু বলতে চাই না। আজকের দিনে যখন শেখ হাসিনার এ জন্মদিন, তখন তার এভাবে চিৎকার করে অপজিটে বক্তৃতা করার, আমাদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছেলেরা যে মিটিং করছেন তাদেরকে যেন চ্যালেঞ্জ দিয়ে বক্তৃতা করছেন।”

এ ধরনের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করায় কঠোর সমালোচনাও করেন প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেত্রী। এর বিচারের ভারও নেতাকর্মীদের কাছে দেন তিনি।

“এটা কোনো দিন দেখি নাই; আশা করি, কোনোদিন দেখবও না। বঙ্গবন্ধুর নাম নিয়ে নিজেদের প্রচারে নেমে সেটা এ মিটিংয়ের সঙ্গে যায় না।”

তখনও ওপাশ থেকে হাছান মাহমুদের কণ্ঠ ভেসে আসছিল। সাজেদার বিরক্তি দেখে তার পাশে থাকা একজন বলে ওঠেন, “এটা আমাদের হাছান। আমাদের পরিবেশের হাছান।” এ সময় অন্যরাও তার সঙ্গে তাল মেলান।

তখন হাছান মাহমুদকে উদ্দেশ করেই বক্তব্য থামানোর অনুরোধ জানান সাজেদা।

“আমি সাজেদা চৌধুরী বলছি, এ দল বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর ছিল না। সব নেতারাই গায়েব হয়ে গিয়েছিল। হাছান মাহমুদকে বলব- আপনি একটু সংবরণ করুন; আমি শেষ করছি। এ বেয়াদবিটা কখনো সহ্য করব না।”

আগামীতে কখনো বত্রিশ নম্বরের সামনে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ না করার নির্দেশও দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য।

এসময় পাশ থেকে সাজেদাকে বলা হয়, “এখন বন্ধ করছে। আপনি বুঝতে পারেননি।”

সাজেদা তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে বলেন, “কী বল বন্ধ করছে? না, না। কী বন্ধ হয়েছে। আওয়াজ আসছে।”

এবার সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে কথা বলেন সাজেদা।

“উনি কী ছিলেন? কবে আসছেন? সবই আমার জানা আছে? এখন আমার সঙ্গে উনি পাল্টাপাল্টি করতে যান-আমিও ইতিহাস জানি। যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় মৃতদেহগুলো পড়েছিল। কেউ আসেনি।…যারা আজকে গলা লম্বা করে বক্তব্য দিচ্ছেন, তাদের বয়স কত ছিল জিজ্ঞেস করেন।”

“আপনাদের বলব-এ বেয়াদবিটা কখনো সহ্য করব না। এ বেয়াদবি বন্ধ করেন,” নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন সাজেদা।

পাশ থেকে যখন জানানো হচ্ছিল- “হাছানের বক্তব্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।” তাতেও ক্ষোভ কমেনি সাজেদা চৌধুরীর।

তখনও কনিষ্ঠ নেতা হাছানের মৃদু কণ্ঠ ভেসে আসায় তার আচরণকে ‘বৃহত্তম বেয়াদবি’ বলেও অভিহিত করেন জ্যেষ্ঠ নেতা সাজেদা।

“আজ নতুন নেতারা এখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে বক্তব্য দেবেন, এটা আমি প্রথম দেখলাম। এটা স্মরণকালের বৃহত্তম বেয়াদবি।”

২০০৮ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হন, পরে পরিবেশ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। পরে ওই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হন তিনি। এবার সংসদ সদস্য হলেও মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি তিনি।

‘সাজেদা ফুফু ছিলেন আয়োজকরাও জানতেন না’

জ্যেষ্ঠ নেতা সাজেদা চৌধুরীর ‘উষ্মা’ প্রকাশ নিয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি জানতামই না পাশের স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনুষ্ঠানে সাজেদা ফুফু রয়েছেন। আয়োজকরাও বিষয়টি জানতো না।”

মটরচালক লীগের অনুষ্ঠানে হাছানের সঙ্গে স্থানীয় সাংসদ ফজলে নূর তাপসও ছিলেন।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনুষ্ঠানে উপস্থিত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বক্তব্যের পরেই নিজের অনুষ্ঠানে বক্তব্য শুরুর কথা মটরচালক লীগের আয়োজকদের আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন সাবেক মন্ত্রী হাছান।

“ওখানে হানিফ ভাইয়ের বক্তব্যের পর আমার অনুষ্ঠানে আমি বক্তব্য শুরু করি। আমাদের আওয়াজ যেমন ওখানে যাচ্ছিল, সেখানকার আওয়াজও আসছিল। ভাষণের দু’তিন মিনিটের মধ্যে যখন জানতে পারি সাজেদা ফুফু বক্তব্য দিচ্ছেন তখনই মাইক বন্ধ করে দিই।”

সাজেদা চৌধুরীর বক্তব্যের পরই আবার বক্তব্য রাখেন বলে জানান হাছান।

“ফুফু হয়ত কিছু বলেছেন, আমি সেখানে শুনিনি। এখন জানলাম। আয়োজকরা তো জানতই না সাজেদা ফুফু আছেন সেখানে। আমার তো জানার প্রশ্নই উঠে না। আমি বা আমরা যে বিষয়টা জানি না, সাজেদা ফুফু তাও জানতেন না মনে হয়।”