বিএনপিকে ‘ধৈর্য’ ধরার পরামর্শ সুরঞ্জিতের

‘বিএনপি নির্বাচনের ট্রেন মিস করেছে’ মন্তব্য করে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় পরবর্তী নির্বাচনের জন্য দলটিকে ‘ধৈর্য’ ধরার পরামর্শ দিয়েছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2014, 04:29 PM
Updated : 27 Sept 2014, 04:29 PM

শনিবার চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ হোটেলে ‘সাংবিধানিক সংস্কার: গণতন্ত্র ও সুশাসন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ পরামর্শ দেন তিনি।  

‘ফোরাম ফর পিপলস ভয়েস’ নামে একটি সংগঠন আয়োজন করে এই গোলটেবিল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুরঞ্জিত বলেন, বিএনপি নির্বাচনের ট্রেন মিস করেছে। এখন পরবর্তী নির্বাচনের ট্রেন না আসা পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে।

রাজনৈতিক ‘অদূরদর্শিতার’ কারণে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় নি উল্লেখ করে দলটি এখন সেই ভুলের ‘মাশুল’ দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

“আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। কোন গায়েবি বা সামরিক ফরমানে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। নির্বাচন নিয়ে তাই বিএনপির ভয় অমূলক। নির্বাচন বিষয়ে বিএনপির হতাশ হওয়ার কিছু নাই।”

বর্তমান সাংঘর্ষিক রাজনীতির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, দেশ ও জাতি নির্মাণে যে রাজনীতি আমরা করেছি এখন ‍আর তার ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নাই।

“রাজনৈতিক সহিংসতায় মানুষ তো আক্রান্ত হচ্ছেই এমনকি গরু পর্যন্ত বাদ যাচ্ছে না।”

বাংলাদেশের সংবিধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “৭২এ সারা বিশ্বে বাঙ্গালী যে কয়েকটি বিষয়ের জন্য প্রশংসিত হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল এই সংবিধান।”

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বিলের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণ প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেন সুরঞ্জিত।

তিনি বলেন, “১৯৫৬ সালে যে সংবিধান তৎকালীন পাকিস্তানে ছিল সেখানেও বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা ছিল সংসদের। ’৭২ সালের সংবিধানেও এটা ছিল। এখন আবার তা ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

“সংবিধানের প্রতি আনুগত্যে সবাইকে একমত হতে হবে। তাহলেই অধিকাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”

‘গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে সময় লাগে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ইংল্যান্ডে এখন আমরা যে গণতন্ত্রের রূপ দেখতে পাচ্ছি তা প্রতিষ্ঠা করতে তাদের ৫০০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে।”

“সুতরাং আমাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে আমাদের ধৈর্য ধরা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।”

বাংলাদেশের গণতন্ত্রে এখন ধর্ম ও জঙ্গিবাদ তাদের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন সুরঞ্জিত।

“আয়মান আল জাওয়াহিরির সাম্প্রতিক হুমকির পর বাংলাদেশের গণতন্ত্র ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।”

রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে রাজনীতিবিদদের একসঙ্গে বসে আলোচনার আহ্বানও জানান তিনি।

‘ফোরাম ফর পিপলস ভয়েস’র সভাপতি ড. মনজুর-উল-আমিনের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন বিনএপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।

মাহবুব হোসেন বলেন, “সরকারের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডে আদালত যাতে কোন হস্তক্ষেপ করতে না পারে তার জন্য বিচারকদের মানসিক চাপে রাখতে অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হত’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই সংসদ সংশোধনী আনার ক্ষমতা রাখে না।”

‘বিচার ব্যবস্থায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ আটকে রেখে হঠাৎ কেন ষোড়শ সংশোধনী করা হল’ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের জন্য একটি পৃথক সচিবালয়ের গঠন করার কাজ ও প্রধান বিচারপতি কর্তৃক নিম্ন আদালতের বিচারকদের পদায়নের বিষয়টি নিয়ে সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই‌।

“অথচ এই কাজগুলি করলে বিচারব্যবস্থায় অনেক গতি আসত, জনগণ সুবিধা ভোগ করতো।”

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ বলেন, ষোলটি সংশোধনীর কোনটিতেই জনগণের স্বার্থের প্রতিফলন ঘটেনি।

“সংবিধানে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা রাখা হবে, অন্যদিকে দেশ চলবে বাজার অর্থনীতি দিয়ে। এটা স্ববিরোধিতা।”

গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করারও আহ্বান জানান তিনি।

গোলটেবিলে ‘সাংবিধানিক সংস্কার: গণতন্ত্র ও সুশাসন’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সাংবাদিক ও কলামনিস্ট মিজানুর রহমান খান।