বিলে সই না করার আহ্বান বিএনপির

সংসদে পাস হওয়া সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিলে সই না করে তা সংসদে ফেরত পাঠানোর জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2014, 06:46 AM
Updated : 22 Sept 2014, 06:46 AM

উচ্চ আদালতের বিচারকদের সরানোর ক্ষমতা সংসদকে দিয়ে সংবিধান সংশোধনের প্রতিবাদে সোমবার সারাদেশে ২০ দলীয় জোটের সকাল-সন্ধ্যা হরতালের মধ্যে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “আমাদের এই শান্তিপূর্ণ হরতালের মাধ্যমে এই বার্তা দেয়া হচ্ছে- বিচার বিভাগের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ মেনে নেয়া হবে না। বিচার বিভাগকে পুতুল হিসেবে ব্যবহার করা জনগণ মেনে নেবে না।

“আমরা রাষ্ট্রপতির প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনি দেশের মানুষের দাবির প্রতি সাড়া দিয়ে এই ষোড়শ সংশোধন বিলে সই না করে বিজ্ঞ আইনজীবী হিসেবে তা সংসদে পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাবেন।তা না হলে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠার চতুর্থ সংশোধনীর মতো ১৭ সেপ্টেম্বর দিনটিও ইতিহাসে কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।”

গত ১৭ সেপ্টেম্বর সংসদে সর্বসম্মত ভোটে ষোড়শ সংশোধনী বিল পাস হয়। এই বিল পাসের মধ্য দিয়ে বিচারপতিদের অভিশংসন ও অপসারণ ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়ালের পরিবর্তে সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

সংসদ কোনো বিল পাস হলে তা সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করা হয়। তিনি সই করলেই বিলটি আইনে পরিণত হয়।

রাষ্ট্রপতি কোনো সংশোধন প্রয়োজন মনে করলে পুনর্বিবেচনার জন্য বিলটি সংসদে ফেরত পাঠাতে পারেন। তা না হলে ১৫ দিনের মধ্যে তিনি সই না করলেও বিলে তিনি সম্মতি দিয়েছেন ধরে নিয়ে গেজেট জারি হবে।

রাষ্ট্রপতি ওই ১৫ দিনের মধ্যে বিলটি সংসদে ফেরত পাঠালে সংসদ তা পুনর্বিবেচনা করে সংশোধনসহ অথবা সংশোধন ছাড়াই সম্মতির জন্য আবার রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে। এরপর সাত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি তাতে সই করবেন। ওই সময়ের মধ্যে তিনি সই না করলেও রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিয়েছেন বলে ধরে নেয়া হবে।

সংসদে বিল পাসের পর গত শনিবার এই হরতাল ডাকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। তারা মনে করে, বিল পাস করে বিচারপতিদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করা হলো, এতে জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে।

শাহজাহান অভিযোগ করেন,  তাদের ‘শান্তিপূর্ণ হরতালে’ বিভিন্ন জেলায় পুলিশ ‘প্রতিবন্ধকতা’ সৃষ্টি করছে। জোটের অন্তত ২০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

“কিছু কিছু জায়গায় পুলিশ উস্কানিমূলকভাবে দল ও জোটের নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বাধা দিচ্ছে। সরকারকে বলব, দয়া করে আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বাধা দেবেন না। আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এই হরতাল করছি না। এটি জনগণের একটি ন্যায়সঙ্গত দাবির হরতাল।”

অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করীম শাহিন সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।

হরতালের কারণে সকাল থেকেই বিএনপি কার্যালয়ের আশেপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কার্যালয়ের কাছেই রয়েছে জল কামান, সাঁজোয়া যান ও প্রিজন ভ্যান।

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের এটাই প্রথম হরতাল।