গণজাগরণ মঞ্চের আবেদন ফুরিয়েছে: মেনন

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের আবেদন এখন নেই বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2014, 03:10 PM
Updated : 20 Sept 2014, 06:15 PM

গণজাগরণ মঞ্চের মধ্যে বিভেদের মধ্যে শনিবার বিবিসির সংলাপে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চূড়ান্ত রায়ের পর শাহবাগে বিক্ষোভে পুলিশি হামলার প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেন তিনি। 

মন্ত্রী মেনন বলেন, “গণজাগরণ মঞ্চ এখন তিন ভাগে বিভক্ত। মানুষের মধ্যে গণজাগরণ মঞ্চের সেই অ্যাপিল আর নেই।”

গত বছর গড়ে ওঠা শাহবাগ আন্দোলনের সমর্থক মেননের দল ওয়ার্কার্স পার্টির সহযোগী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী গণজাগরণ মঞ্চে সক্রিয় ছিল।  

তবে সাঈদীর চূড়ান্ত রায়ের পর শুক্রবার শাহবাগে গণজাগরণমঞ্চের যে তিনটি অংশ আলাদা সমাবেশ করেছিল, তার একটি অংশের নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু।

প্রতিষ্ঠাকালীন মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার নেতৃত্বাধীন গণজাগরণ মঞ্চের অভিযোগ, সরকারের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আঁতাতের ফল হিসেবে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমে আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছে।

আপিল বিভাগের রায়ে ‘বিস্মিত’ হননি জানিয়ে মেনন বলেন, “কোর্ট এর আগেও এ ধরনের আচরণ করেছে। গোলাম আযমের নাগরিকত্ব নিয়ে যখন সারাদেশে আন্দোলন চলছে, তখন জন্মসূত্রে নাগরিক এই প্রশ্নে কোর্ট নাগরিকত্ব দিয়েছে।

“সুপ্রিম কোর্টের উচিত ছিল, মানুষের প্রত্যাশা বিবেচনা করা। যে কোনো আদালতেরই উচিত বাস্তবতা বিবেচনা করা।”

প্রত্যাশা, না কি আইন দেখে রায় দেয়া উচিত-এই প্রশ্নে সংসদ সদস্য মেনন বলেন, “আইনের বইতে যেভাবে বলা আছে, সেভাবে দেখতে গেলে অনেক রায়ই দেওয়া যাবে না।”

আওয়ামী লীগ-জামায়াত ‘আঁতাতের’ অভিযোগ প্রসঙ্গে সংলাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “এই সন্দেহ করাটা যৌক্তিক, যদিও আমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই। অতীতে জামাতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ যুগপৎ কর্মসূচি দিয়েছিল।

“বিএনপি-জামাত সমঝোতা যতটা প্রকাশ্য, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ততটা নয়। আওয়ামী লীগ দূরত্ব বজায় রেখেই সমঝোতা করে। আর রাজনৈতিক বিবেচনায় যে সাঈদীর রায় হয়েছে, সেটা মানুষ বিশ্বাস করে।”

“জাহানারা ইমামের আন্দোলনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ বেঈমানি করেছে। আওয়ামী লীগ বিএনপির চেয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বেশি ধারণ করলেও ক্ষমতার লোভে যে কোনো কিছু করতে পারে।”

এরশাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা মেনন এসময় আসিফ নজরুলের ওই সময়ের অবস্থান এবং এখনকার অবস্থানের তুলনা করে বলেন, “আসিফ নজরুল এখন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। টকশো দেখে সেটাই মনে হয়।”

আসিফ নজরুল সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিবাদ করে বলেন, “কে বলে ভিন্নতা আছে। বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুললেই বলা হয় ভিন্নমত। আমি প্রথম আলোতে চারটি লেখা লিখেছি।”

সংলাপে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, আদালতের রায়ের প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল।

“তবে বিচার বিভাগ যেরকম স্বাধীন থাকার কথা সেরকম স্বাধীন নেই। রায় নিয়ে আপস হয়েছে, রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা হয়েছে। এর প্রতিবাদ আমরা জানাব।”

শহীদ বুদ্ধিজীবী আলিম চৌধুরীর মেয়ে নুজহাত চৌধুরী বলেন, “আঁতাতের কারণে এমন রায় হয়েছে সেটা বলব না। মানুষের মধ্যে আশঙ্কা থাকতেই পারে। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধী শিবির বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেষ্টা চালাচ্ছে।”

সম্প্রতি প্রশাসনের সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তদের মুক্তিযুদ্ধের সনদ জালিয়াতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রাশেদ খান মেনন বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এদের চাকরিচ্যুত করা উচিত। দুদক এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে, আশা করি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।”

আসিফ নজরুল এ প্রসঙ্গে বলেন, “৭১ সাল থেকেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিষয়টি শুরু হয়েছে। মুজিব বাহিনীর অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করেছে বলে অভিযোগ আছে। অনেক নেতাও যুদ্ধ করেনি। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে চেতনা নিয়ে ব্যবসা হচ্ছে বলেই জালিয়াতি হয়েছে।”