সোমবার হরতাল ডেকেছে ২০ দল

সংসদকে উচ্চ আদালতের বিচারকদের সরানোর ক্ষমতা দিয়ে সংবিধান সংশোধনের প্রতিবাদে সোমবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2014, 12:58 PM
Updated : 20 Sept 2014, 06:23 PM

শনিবার গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে জোটের এক বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

২০ দলের কর্মসূচির আগের দিন রোববার জোটভুক্ত দল জামায়াতে ইসলামীর হরতাল রয়েছে। যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি দাবিতে দলটি গত বৃহস্পতিবারের সঙ্গে রোববারও একই কর্মসূচি দেয়।

জামায়াতে ইসলামীর আগে এই সরকার আমলে প্রথম হরতাল ডেকেছিল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। জামায়াতবিরোধী সংগঠনটি তাদের নেতা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গত মাসে একদিন হরতাল ডাকে।

তবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের এটাই প্রথম হরতাল কর্মসূচি।

হজযাত্রী পরিবহনের গাড়ি, খাবার হোটেল, ওষুধের দোকান, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, লাশবাহী গাড়ি ও সংবাদপত্রের গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

নির্বাচন বর্জন করে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি বিচারপতিদের সরানোর ক্ষমতা আইনপ্রণেতাদের হাতে নেওয়ার বিরোধিতা করে আসছিল। 

ফখরুল বলেন, “আমরা অবৈধ ও অনৈতিক সংসদের কাছে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা দেওয়ার বিরোধিতা আগে থেকে করে আসছি। কিন্তু সরকার কোনো কিছুতে কর্ণপাত করেনি।”

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ’৭২ এর সংবিধানে সংসদের কাছে থাকলেও তা ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনের (বাকশাল গঠন) পর রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত হয়।

চতুর্থ সংশোধনী বাতিলের পর জিয়াউর রহমান এক সামরিক ফরমান বলে বিচারপতি অপসারণের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেন।

আওয়ামী লীগ আবার আগের পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করে।

ফখরুল বলেন, “দেশের জনগণ এই সংশোধন মানে না।

“গণবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে নিজেদের অবৈধ ও অনৈতিক ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার হীন উদ্দেশ্য সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন পাস করেছে। এর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণ ও অভিশংসন ক্ষমতাকে একটি দলের অর্থাৎ আওয়ামী লীগের অধীনে চলে গেল।”

বিএনপি মনে করে, এখন বিচারপতিদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করা হল, এতে জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে।

বিএনপির এই আশঙ্কার প্রতিক্রিয়ায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, রায়ের জন্য কোনো বিচারককে অপসারণের সম্মুখীন হতে হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মূর্তজা, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম, জাগপার মহাসচিব খোন্দকার লুৎফর রহমান, ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান, জমিয়তে উলামা ইসলামের মহাসচিব মহিউদ্দিন ইকরাম,সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, বিজেপির সালাহউদ্দিন মতিন প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনের আগে বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হয়। ফখরুলের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য রিদওয়ান উল্লাহ শাহিদী, লেবার পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, খেলাফত মজলিশের আলী আজগর, ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি মুহাম্মদ তৈয়ব উপস্থিত ছিলেন।

জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর দলীয় কার্যালয়ে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ফখরুল।

ওই বৈঠকে ছিলেন শামসুজ্জামান দুদু, আমানউল্লাহ আমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালাম, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আবদুল লতিফ জনি, আবুদুস সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু, সুলতানা আহমেদ, হাফেজ আবদুল মালেক, আবুদল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশীদ হাবিব।

ওই বৈঠকের পরই হরতালের কর্মসূচি নিয়ে দলীয় প্রধানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।