জোট ছাড়ার হুমকি এনডিপির

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে ‘অধিকতর গণতান্ত্রিক চর্চা’সহ পাঁচ দফা দাবি পূরণে খালেদা জিয়াকে ৭২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) একাংশ। অন্যথায় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2014, 06:38 AM
Updated : 20 Sept 2014, 08:02 AM

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এনডিপির একাংশের নতুন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলমগীর মজুমদার এই ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, “ভারতের বিষয়ে জোটনেত্রীকে তার অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। জোটের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। জনগণের আশা-আকাঙক্ষা পূরণে আন্দোলনের তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। জোটে অধিকতর গণতন্ত্র চর্চা করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কী?

“এসব বিষয়ে সুরাহা করতে জোট নেত্রীকে আমরা ৭২ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। নইলে আমাদের জোট থেকে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর থাকবে না।”

জোট থেকে বেরিয়ে গেলে নতুন জোট গঠন করবেন বলেও জানান আলমগীর মজুমদার।

এনডিপির চেয়ারম্যান পদ থেকে খোন্দকার গোলাম মূর্তজাকে অব্যাহতি দিয়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করার কথাও বলেন  নতুন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলমগীর মজুমদার।

খোন্দকার গোলাম মূর্তজার নেতৃত্বে এনডিপির মহাসচিব ছিলেন আলমগীর মুজমদার।

এনডিপির এই অংশের নতুন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে আলিনুর রহমান খান সাজুকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাকরাইলের ঈসা খাঁ হোটেলের কনফারেন্স কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনে অতিথি সারিতে  জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নীলু, মহাসচিব আবদুল হাই মণ্ডল, ন্যাপ-ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হকও ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ রশীদ প্রধান, যিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন বলে সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

অতিথি সারিতে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান সেকান্দর আলী মনিও ছিলেন।

আলমগীর মজুমদারের পাশে বসেছিলেন এনডিপির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মাহবুবুল আলম ফারুক, তপন খান, এ আর জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মির্জা আমিন আহমেদ ইয়ান।

তার সঙ্গে দলের সম্পাদকমণ্ডলির সদস্যদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন, জয়নাল আবেদিন, মাওলানা আবদুল কাইয়ুমও ছিলেন। এছাড়া দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন খান বাদশা, মনিরুজ্জামান মুনির, লিয়াকত আলী ও শাহ আলমও ছিলেন।

এর আগে গত ২৪ অগাস্ট ন্যাশনাল পিপপলস পার্টির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নীলুর নেতৃত্বে একটি অংশ জোট থেকে বেরিয়ে যায়। তার আগে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপির জোটসঙ্গী দল ন্যাপ ভাসানী জোট ছেড়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে আলমগীর মজুমদার বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ ভারতবিরোধী। অথচ জোট নেত্রী ক্ষমতায় গেলে ভারতের সঙ্গে পানি সমস্যাসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে কি করবেন, তা নিয়ে তিনি কোনো কথা জনগণের কাছে বলছেন না।”

ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ঢাকা এলে তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ না করা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “অথচ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা হোটেলে গিয়ে  তিনি অপেক্ষা করেছেন।”

আন্দোলনের কর্মসূচি নেয়ার ক্ষেত্রে জোটের শরিক দলগুলোর নেতাদের কোনো মতামত নেয়া হয় না অভিযোগ করে তিনি বলেন, “ বিএনপি একক সিদ্ধান্তে কর্মসূচি ঠিক করে।”

“ভারতের বিষয়াদিসহ অন্যান্য বিষয়ে জোটনেত্রীর পক্ষ থেকে যদি সৎ উদ্যোগ কিংবা সমাধান না আসে, তাহলে ২০ দলীয় জোট ৫০ দলীয় জোটে রূপান্তর করে এই অনৈতিক সরকারকে হটানো যাবে না।”

খোন্দকার গোলাম মূর্তজার বিষয়ে তিনি বলেন, “গত ১২ সেপ্টেম্বর দলের প্রেসিডিয়াম সভা ও ১৯ সেপ্টেম্বর নির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। দলের নীতি-আদর্শ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিবর্জিত কার্যক্রমের কারণে তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের এক পর্যায়ে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট থেকে ১৮ দলীয় জোট হয়।

বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্র্টি (এলডিপি), কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানী,  মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, পিপলস লীগ ও ডেমোক্রেটিক লীগ নিয়ে ওই জোট হয়।

পরে কাজী জাফর আহমেদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একাংশ ও সাম্যবাদী দলের একাংশ এই জোটে যোগ দেয়ায় এটি ২০ দলীয় জোটে রূপ নেয়।