সাঈদীর রায় কাঙ্ক্ষিত ছিল না: হাসিনা

আপিল বিভাগে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় আমৃত্যু কারাদণ্ডে পরিবর্তিত হওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই রায় কাঙ্ক্ষিত না হলেও আদালতের আদেশ শিরোধার্য।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2014, 04:15 PM
Updated : 18 Sept 2014, 05:24 PM

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাঈদীর আপিলের রায়ের একদিন পর বৃহস্পতিবার প্রথম এই বিষয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, সাঈদীর ফাঁসি হলেই বাংলাদেশের মানুষ খুশি হত।

সাঈদীর রায়ের ক্ষুব্ধ গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগও তোলা হয়, তবে তা নাকচ করেন মন্ত্রীরা।

জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, “এই রায় কারো কাছে কাঙ্ক্ষিত ছিল না।”

অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও সাঈদীর মামলায় আদালতের রায় নিয়ে কিছু বলতে চাননি তিনি। “সাঈদীর ফাঁসি হলে দেশের মানুষ খুশি হত। দেশের আদালত স্বাধীন, বিচার বিভাগ স্বাধীন। এই রায় নিয়ে বলার কিছু নেই।”

তবে আদালতে সাঈদীর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এখন জামায়াতের এই নেতাকে সবই অন্যভাবে চিনবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা।   

“সাঈদী ধর্মগুরু, ধর্ম প্রচারক হিসাবে নাম করে নিয়েছিল। এখন তাকে একজন খুনি, ধর্ষক, অপরাধী, যুদ্ধাপরাধী হিসাবে জনগণ মনে রাখবে। মুখে ভালো কথা বললেও সে একজন জঘন্য লোক ছিল।”

২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিলে তার প্রতিক্রিয়ায় হরতাল ডেকে সারাদেশে তাণ্ডব চালিয়েছিল জামায়াত। বুধবার আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ের পরও হরতাল ডেকেছে দলটি। 

এই হরতালের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জামাত কি ফাঁসি হলে খুশি হত? এই হরতাল তো বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে, বিচার বিভাগই দেখবে।”

সব বিরোধিতা মোকাবেলা করে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধে চার দশক পর যিনি একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচারের উদ্যোগ নেন।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে সংসদ নেতা হাসিনা বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা আইন প্রণেতাদের হাতে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

“বিচারপতিদের অপসারণের জন্য আগে তিন সদস্যের জুডিশিয়াল কাউন্সিল ছিল। তিনজনের কাছে তাদের ভাগ্য ঝুলে থাকত। এখন দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতিতে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ যাবে।”

সংবিধান সংশোধনে বিভক্তি ভোট দিচ্ছেন শেখ হাসিনা (বুধবারের ছবি)

“সংশোধনের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সম্মান, পবিত্রতা আরও সুরক্ষিত করা হয়েছে। যারা এর সমালোচনা করছেন, তারা না বুঝেই করছেন, বাস্তব কথা কেউ চিন্তা করছেন না।”

সংবিধান সংশোধনের এই উদ্যোগের সমালোচনাকারী সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মইনুল হোসেনের সমালোচনাও করেন শেখ হাসিনা।

“একজন ব্যারিস্টার, যে বাপের হোটেলে খেয়ে বড় হয়েছে; মিথ্যা অ্যাফিডেফিট দিয়ে বারিধারায় জমি নিয়েছে; কাকরাইলে অবৈধভাবে মাল্টিস্টোরেড দালান করেছে;এই ব্যারিস্টার বঙ্গবন্ধুর খুনি হুদাকে নিয়ে রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন, দল গঠন করেছিলেন। কিন্তু রাজনীতিতে সফল হতে পারেননি। তিনি আমার কাছে ধর্না দিয়েছিলেন উপদেষ্টা হওয়ার জন্য। এরা সুসময়ে সরব, আর দুঃসময়ে নীরব। এরা নারীকে যত অসম্মান করবে, সংসদে নারীদের সংখ্যাও বাড়বে।”

সংসদ নেতা নিজের চেয়ারের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “তারা সফল হলে তো এই জায়গায় থাকত, তারা ব্যর্থ।”

প্রায় পৌনে একঘণ্টার বক্তব্যে শেখ হাসিনা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।

বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ব্যাংক খাতে অনিয়মের অভিযোগ, জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ার যে সমালোচনা করেছেন, তার জবাবেও দেন প্রধানমন্ত্রী।

ঢাকায় জলাবদ্ধতার জন্য রওশনের দল জাতীয় পার্টিকে দায়ী করে তিনি বলেন, “এই অকামটা আপনারা করে গেছেন। পান্থপথে বক্স কালভার্ট করেছেন। পান্থপথ খালের দু’দিকে রাস্তা থাকলে অনেক সুন্দর হত।”