রোববার সংসদ অধিবেশনে যোগ দিলেও সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত দলের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অনুপস্থিতির জন্য নিজের ‘অসুস্থতাকে’ কারণ দেখিয়েছেন তিনি।
জাতীয় পার্টির গৃহবিবাদ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের মধ্যে রওশন এরশাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে তার ও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার অনুপস্থিতি নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি করে।
এসব বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ঠিক নয় দাবি করে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেছেন, দলের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মী তার ‘নির্দেশেই’ কাজ করে যাচ্ছেন।
সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন গুঞ্জনের মধ্যে সোমবার এক বিবৃতিতে দলের অবস্থান স্পষ্ট করার প্রয়াস চালিয়েছেন এরশাদ।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আমি এই দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি।
“আমার দলের মধ্যে কোনো বিভক্তি সৃষ্টি হতে পারে না এবং জাতীয় পার্টির মধ্যে কোনো বিভক্তি নেইও। পার্টির প্রত্যেক নেতা-কর্মী আমার নির্দেশে কাজ করে যাচ্ছেন।”
জাতীয় পার্টিতে গৃহবিবাদ নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরকে ভিত্তি দিয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু রোববারই সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তার দলের মধ্যে ‘অনেক ঝামেলা’ চলছে।
জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলী থেকে সম্প্রতি এরশাদ অব্যাহতি দেন মশিউর রহমান রাঙ্গা ও তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে। রাঙ্গা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন, তাজুল সংসদে বিরোধী দলের প্রধান হুইপ।
সরকার থেকে সরে দাঁড়ানোর আলোচনা চলছে বলে এরশাদ কিছু দিন আগে বলেছিলেন। তখন এই দুজন এরশাদের সরকারি পদ (প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত) ছাড়ার কথাটি তোলায় তাদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে জাতীয় পার্টি সূত্রের খবর।
গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সামরিক শাসক এরশাদ বিবৃতিতে বলেন, “পার্টির গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতাবলে আমি দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যকে অব্যাহতি প্রদান করেছি। এটা করার এখতিয়ার আমার আছে। এতে দলের বিভক্তির কোনো অবকাশ নেই।”
অব্যাহতি পাওয়া রাঙ্গা ও তাজুলের সঙ্গে সংসদ ভবনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর তর্কাতর্কি সাংবাদিকদের সামনেই ঘটেছে গত সপ্তাহে।
এরশাদের পাশাপাশি বাবলুও সংসদীয় দলের সভায় যাননি। সেইসঙ্গে অনুপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদমন্ত্রী ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদও। বৈঠকের সময় তারা দুজন সংসদ ভবনে এরশাদের কক্ষে অবস্থান করছিলেন।
নিজের অনুপস্থিতির বিষয়ে এরশাদ বলেন, “গতকাল কিছুটা অসুস্থ বোধ করায় আমি প্রথমে চেকআপের জন্য সিএমএইচে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য বিকাল ৫টার দিকে সংসদে গেছি।তখন পার্লামেন্টারি কমিটির বৈঠক শেষ হয়ে গেছে।”
রওশনের বৈঠক চলার সময় এরশাদ সাতজন এমপিকে নিয়ে তার নিজ কক্ষে আলাদা বৈঠক করেন বলে কয়েকটি সংবাদপত্রে যে খবর ছাপা হয়েছে, তা নাকচ করেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান।
মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পাশাপাশি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা মনোনয়ন নিয়েও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশনের বিরোধ এখন প্রকাশ্য।
রওশন বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে কাজী ফিরোজ রশীদকে মনোনয়ন দিয়ে স্পিকারকে চিঠি দিলেও পাল্টা চিঠিতে ফিরোজ রশীদকে মনোনয়ন না দেওয়ার অনুরোধ শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে রেখেছেন এরশাদ।
নানা নাটকীয়তার মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিএনপিবিহীন সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসন নেয় জাতীয় পার্টি। এরশাদের স্ত্রী ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রওশন হন বিরোধীদলীয় নেতা।
এরশাদের অনুপস্থিতিতে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর রওশন বলেছিলেন, সব এরশাদের নির্দেশেই হচ্ছে। অন্যদিকে এরশাদ বলেন, রওশন তার স্ত্রী এবং তার মতের বিরুদ্ধে যান না।
এরপর সম্প্রতি দলের একটি প্রকাশ্য সভায় এরশাদ বলেন, তারা মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করছেন এবং শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচিত এরশাদ বিবৃতিতে তার ওই অবস্থান বদলে ফেলেছেন।
তিনি বলেন, “দলীয় ফোরামে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি। আমি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলাম, আমরা মন্ত্রিসভায় থাকব কি থাকব না এমন প্রশ্ন উত্থাপিত হলে প্রেসিডিয়ামে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
“এ ব্যাপারেও কিছু মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশিত হয়েছে। আমি স্পষ্টভাবে জানাতে চাই যে জাপার মন্ত্রী সভায় থাকা না থাকা নিয়ে যদি কোনো প্রশ্ন আসে সে ব্যাপারে একমাত্র প্রেসিডিয়ামই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।”