মওদুদকে নিয়ে প্রশ্ন লন্ডনফেরত রিজভীর

বিগত চার দলীয় জোট সরকার নিয়ে মওদুদ আহমেদের লেখা সাম্প্রতিক বইয়ের ভাষ্য ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2014, 08:39 AM
Updated : 15 Sept 2014, 06:55 PM

চার দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী হয়েও মওদুদ ‘কার সন্তুষ্টির জন্য’ এমন ভাষ্য দিয়েছেন- সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।

সোমবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে রিজভী বলেন, “নিজের বাড়ি রক্ষার জন্য, নাকি ক্ষমতাসীন দলের মন রক্ষার জন্য এরকম ভাষ্য তিনি দিয়েছেন তা জানি না। আমি মনে করি তার এহেন ভাষ্য দুর্ভাগ্যজনক।”

লন্ডন সফরে দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারমান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে শনিবার দেশে ফেরেন বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব।

ফাইল ছবি

সরাসরি নাম উল্লেখ না করলেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদের দলবদলের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে ইংগিত করে রিজভী তাকে কখনো উল্লেখ করেন ‘দল ছুট ও আদর্শ ছুট’ নেতা হিসাবে, কখনো আবার তুলনা করেন কাকের সঙ্গে।

‘বাংলাদেশ: ইমার্জেন্সি অ্যান্ড দি আফটারম্যাথ: ২০০৭-২০০৮’ শিরোনামে ওই বইয়ে চারদলীয় জোট সরকারের ‘অপশাসন’ ও বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের সঙ্গে মিত্রতা, বিএনপি সরকারের কিছু মন্ত্রীর সম্পৃক্ততায় জঙ্গিবাদের উত্থান, তখনকার প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নামে ‘হাওয়া ভবনের দুর্নীতি’ এবং ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ‘বিতর্ক সমাধানে ব্যর্থ হয়ে’ ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে দায়িত্ব দেয়ায় মতো বিষয়গুলো এসেছে।

মওদুদের মতে, মূলত এসব কারণেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোটাররা বিএনপির কাছ থেকে ‘মুখ ফিরিয়ে নেন’।

অন্যদিকে বইয়ের একটি অধ্যায়ে ওই নির্বাচনের ফলকে নীরব বিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করেন মওদুদ আহমদ, যে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। 

এই বিএনপি নেতার মতে, ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে ও জঙ্গিবাদের বিপক্ষে শেখ হাসিনার অবস্থান এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তার পরিবর্তনের আহ্বানে দেড় কোটি তরুণ ভোটারের ‘দৃষ্টি আকৃষ্ট’ হয়।

পাশাপাশি ১০ টাকায় চাল, বিনামূল্যে সার, প্রতিটি পরিবার থেকে একজনকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। এসব ‘ইতিবাচক’ বিষয়ের পাশাপাশি বিএনপির বিপক্ষে ‘নেতিবাচক ভোটও’ ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়কে ‘এগিয়ে নেয়’ বলে মনে করেন মওদুদ।

বিগত সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাবন্দি অবস্থায় ইংরেজিতে লেখা মওদুদের ওই বই গত শনিবার ইউপিএল থেকে প্রকাশিত হওয়ার পর সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে তুমুল আলোচনা শুরু হয়।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রিজভী বলেন, “দলের পক্ষ থেকে আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না। তবে ব্যক্তিগতভাবে বলব- তিনি নিজেই তো চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী ছিলেন।”

এরশাদ সরকারের উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও উপপ্রধানন্ত্রী পদে থাকা মওদুদের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে ইংগিত করে রিজভী বলেন, “যারা দলছুট, আদর্শছুট এবং নিজের প্রয়োজনে দল পাল্টায়- তাদের এদেশের জনগণ চেনে।”

তিনি বলেন, “সাত-সমুদ্র তের নদী পার হলেও কাক কাকই থেকে যায়। এক ধরণের মানুষ আছে তারা রং বদলায়। ভারতের এক প্রখ্যাত সাংবাদিক তাদের ‘ফাস্ট ফুডের সঙ্গে’ তুলনা করেছেন।”

“১/১১ এর পর খালেদা জিয়ার কাছে তার দুই সন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর ভাগ্যই ছিল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো আলোচনায় যেতে তিনি রাজি ছিলেন না” - মওদুদের বইয়ের এমন ভাষ্য ‘সঠিক নয়’ বলে মন্তব্য করেন রিজভী। 

তিনি বলেন, “আমি বুঝতে পারছি না, কার সন্তুষ্টির জন্য নিজের লেখা বইয়ে এরকম ভাষ্য দিয়েছেন।”

রিজভী বলেন, “দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য বেগম খালেদা জিয়া কখনোই আপস করেননি। দেশের জনগণের কথা ভেবে তিনি দেশ ত্যাগ করেননি। তার ওপর অনেক চাপ ছিল বলেই তারেক রহমানের ওপর বন্দি অবস্থায় নির্যাতন করা হয়েছে।"

ব্যারিস্টার মওদুদকে ‘একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী’ অভিহিত করে রিজভী বলেন, “উনি বইতে লিখেছেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও হাওয়া ভবনের দুর্নীতির কারণে নাকি জোট সরকারের বিদায় হয়েছে। ওই সময়তো তিনি একজন মন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তাহলে ওই সময়ে তিনি কেন পদত্যাগ করলেন না।?”

মওদুদের বইয়ের বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে আপত্তি তুলে রিজভী বলেন, “এসব বই লিখে সত্যকে মুছে ফেলা যাবে না।”

গাড়ি ভাংচুরের একটি মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিরও নিন্দা জানান যুগ্ম মহাসচিব।

তিনি বলেন, “এই সরকার আসার পর আওয়ামী লীগের সাড়ে ৭ হাজার মামলা হাইড্রোজেন বেলুনের মতো নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। অন্যদিকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে আরো মিথ্যা মামলা দায়ের করা হলো।

এভাবে মামলা দিয়ে বিএনপিকে ‘দুর্বল’ করা যাবে না বলেও সরকারকে হুঁশিয়ার করেন রিজভী।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আবদুস সালাম, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করীম শাহিন, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু এই সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।