রওশনের কার্যালয়ে বৈঠকে অনুপস্থিত এরশাদ

সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠকে যাননি দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, যদিও সংসদ অধিবেশনে ছিলেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2014, 02:33 PM
Updated : 14 Sept 2014, 03:37 PM

জাতীয় পার্টিতে গৃহবিবাদের মধ্যে এরশাদের পাশাপাশি রোববারের এই বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদও।

বেলা ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল। বাবলু ও আনিসুল ৩টায় সংসদ ভবনে ঢোকার পর এরশাদের কক্ষেই ছিলেন। এই বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির ৩৫ সংসদ সদস্যের মধ্যে সাতজন।

তবে রওশনের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু দাবি করেন, তাদের দলে কোনো ধরনের কোন্দল নেই।

“চেয়ারম্যান এরশাদ এবং রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আমরা এক এবং অভিন্ন। আমাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতে পারে, কিন্তু বিভেদ কিংবা গ্রুপিং নেই।”

সংসদে উপস্থিত থাকার পরও এরশাদ এবং অন্যদের অনুপস্থিতির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে চুন্নু বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।”

এদিকে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠক শেষে বিকাল ৫টায় অধিবেশন শুরুর কিছুক্ষণ পরই এরশাদ ও রওশন অধিবেশন কক্ষে ঢোকেন।

সংসদের প্রথম সারিতে তাদের আসন পাশাপাশি। মিনিট পাঁচেক অধিবেশনে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে রওশনের সঙ্গে এরশাদকে কথা বলতেও দেখা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দলের যে পরিস্থিতি, তাতে বৈঠকে উপস্থিত থাকলে একটা অ্যামব্যারাসিং পরিস্থিতি হতে পারে, এই শঙ্কা থেকেই স্যার (এরশাদ) বৈঠকে যাননি।”

একই সময়ে অধিবেশনে নিজের আসন ছেড়ে এক সারি পেছনে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গার পাশের আসনে বসে তার সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় মহাসচিব বাবলুকে।

সম্প্রতি দলের সভাপতিমণ্ডলীর পদ হারিয়ে সংসদ লাউঞ্জেই বাবলুর ওপর চড়াও হয়েছিলেন রাঙ্গা ও বিরোধী দলের প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

রাঙ্গা ও তাজুলকে দলীয় চেয়ারম্যান এরশাদ জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর থেকে সংসদে প্রধান বিরোধী দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের খবর ব্যাপকভাবে আলোচিত গণমাধ্যমে।

দলটির ভেতরের বিভিন্ন সূত্রের খবর, বিরোধীদলীয় উপনেতা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্ত্রী রওশনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে এরশাদের। আর এতে দলের অন্য নেতারাও জড়িয়ে পড়েছেন।

রওশনের কক্ষে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ‍মুজিবুল হক চুন্নু, চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, কাজি ফিরোজ রশীদ, এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার, মশিউর রহমান রাঙা প্রমুখ।

নানা নাটকীয়তার মধ্যে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপিবিহীন সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসন নেয় জাতীয় পার্টি, বিরোধী দলের নেতা হন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রওশন।

এর পাশাপাশি সরকারে যোগ দিয়ে জাতীয় পার্টির একজন মন্ত্রী এবং দুজন প্রতিমন্ত্রী হন। এরশাদ হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত।

দলের এক অনুষ্ঠানে একসঙ্গে এরশাদ ও রওশন (ফাইল ছবি)

এর পর বিভিন্ন সময়ে রওশনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের খবর আলোচিত হলেও এরশাদ তা নাকচ করে বলে আসছিলেন, রওশনই তার জীবনের ‘কাণ্ডারী’।

এর মধ্যে গত ২৭ জুলাই সংসদ সদস্য কাজি ফিরোজ রশীদকে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে স্পিকারকে চিঠি দেন রওশন।

এর চার দিন পর ৩১ জুলাই স্পিকারকে চিঠি পাঠিয়ে ফিরোজ রশীদকে বিরোধীদলীয় উপনেতা না করার অনুরোধ জানান এরশাদ।

এরপর গত ৯ সেপ্টেম্বর আবারো একই ইস্যুতে স্পিকারকে পাল্টাপাল্টি চিঠি দেন এই দম্পতি।

এই বিষয়ে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল কাকে সমর্থন করছে- জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে চুন্নু বলেন, “অবশ্যই আমরা মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রস্তাবকে সমর্থন করছি। তিনি যে চিঠিটি দিয়েছেন, তাতে আমাদের ৩২ জন এমপির স্বাক্ষর রয়েছে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিরোধীদলীয় উপনেতার পদটি ফিরোজ রশীদ ও জিয়াউদ্দিন বাবলু উভয়ই চাচ্ছে। তাদের এই দ্বন্দ্বে স্যার এবং ম্যাডামও জড়িয়ে পড়েছেন।”

তার জের ধরেই রাঙ্গা ও তাজুলকে সভাপতিমণ্ডলী থেকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে ওই নেতা জানান।

মন্ত্রিত্ব নিলেও সম্প্রতি কয়েকটি বক্তব্যে সরকারের সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, তারা মন্ত্রিসভা ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, তখন তাজুল ও রাঙ্গা দলীয় চেয়ারম্যানের সরকারি পদ ছাড়ার বিষয়টিও তোলায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বাদ দেন এরশাদ।