মামলা ডিঙিয়ে আন্দোলন চলবে: ফখরুল

মামলা দিয়ে বিএনপিকে আন্দোলনের পথ থেকে পিছু হটানো যাবে না বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2014, 03:14 PM
Updated : 1 Sept 2014, 03:15 PM

সরকারি দলের নেতারা ‘লাগামহীন অশালীন’ বক্তব্য দিলেও তার জবাব দিতে গেলেই বিএনপি নেতাদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে তার অভিযোগ।

দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সোমবার এক আলোচনা সভায় ফখরুল বলেন, “আজ আমার বিরুদ্ধে একটি মানহানি হয়েছে। আমি না কি কী কথা-বার্তা বলেছি। আমাদের দলের এমন কোনো নেতা নেই, যার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। অনেকের বিরুদ্ধে ১৪০টির মতো মামলাও হয়েছে।

“আমরা সরকারকে স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, উনারা যদি মনে করে থাকেন এভাবে মামলা দিয়ে আমাদের পিছু হটিয়ে রাখবেন, তাহলে তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছে। এদেশের মানুষ কখনোই ফ্যাসিবাদ-স্বৈরাচারকে মেনে নেবে না।”

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সকালে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দেয়ার পর বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা করে বিএনপি।

এতে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুলসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা থাকলেও অনুপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসন খালেদা। অনুষ্ঠানের দর্শক সারির সামনে তার জন্য রাখা চেয়ারটি খালি ছিল।

এই আলোচনা অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা আগে ফখরুলের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়, যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তির অভিযোগ আনা হয়েছে।

বিএনপির মুখপাত্র বলেন, “তারা (ক্ষমতাসীন) যে অশালীন ভাষায় একের পর এক কথা বলছেন, এরকম নজির অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না।

“তারা যখন কথা বলেন, একবারও ভাবেন না, পাল্টা জবাব আসতে পারে। এখন জবাব দিলে উল্টো নিপীড়ন-নির্যাতন ও মামলা করা হচ্ছে।”

আলোচনা সভায় বিএনপি গঠনের প্রেক্ষাপট বর্ণনার পর আওয়ামী লীগের দেশ পরিচালনার সমালোচনা করে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে জোরাল আন্দোলনের আহ্বান জানান ফখরুল।  

“এই দানবীয় শক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দ্রুত নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে।”

জঙ্গি উত্থানের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন ফখরুল। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার সমালোচনাও করেন তিনি। বিরোধিতা করেন বিচারপতি অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদে ফেরাতে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগেরও।

বিএনপির গঠনের পটভূমি তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “এই দলটি ১৬ কোটি মানুষের দল।  এই দলের মধ্য দিয়ে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে।

“দেশি-বিদেশি চক্রান্তে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর ষড়যন্ত্রকারীরা মনে করেছিল, বিএনপি শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু বার বার ধ্বংসস্তূপের থেকে ফিনিক্স পাখির মতো এই দলটি জেগে উঠেছে।”

নানা চরাই-উৎরাই পেরিয়ে ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাকে কয়েকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেছেন, বিএনপির কি দুঃসময় যাচ্ছে?

“আমি তাদের বলেছি, বিএনপির নয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন দুঃসময় যাচ্ছে। দেশে গণতন্ত্র নেই, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।”

সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বিএনপির আন্দোলনের পেছনে যুক্তি দেখিয়ে বলেন, “ক্ষমতায় যেতে নয়, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে আমরা আন্দোলন করছি।

“এখন একা চললে হবে না, সবাই নিয়ে এগোতে হবে। তাহলেই এই আন্দোলনে আমাদের বিজয় নিশ্চিত হবে।”

ফখরুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জয়নুল আবদিন ফারুক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজ উদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়াস করীমও সভায় বক্তব্য রাখেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এম এ মান্নান, আবদুল হালিম, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুস সালাম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান, নুরী আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, এম এ মালেক, মীর সরফত আলী সপু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।

আলোচনার সূচনায় বিএনপির ওপর পলিসি ফোরামের নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। আলোচনার পর জাসাসের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গেয়ে শোনান ফরিদা পারভীন, ন্যান্সি, দিলরুবা, মনির খান, হাসান চৌধুরী।