পরাজিত শক্তির উত্থান আর ঘটবে না: হাসিনা

একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে মদদ দেয়ার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের উত্থান আর কখনো বাংলাদেশে ঘটবে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2014, 12:26 PM
Updated : 30 August 2014, 02:44 PM

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

১৫ অগাস্ট জাতির জনককে হত্যার দিনে জন্মদিন উদযাপন করায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘বিকৃত মানসিকতার’ বলেও আখ্যায়িত করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত ধারায় পরিচালিত করার ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে তার সঙ্গে জিয়াউর রহমান এবং পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততার অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলেও জিয়া ক্ষমতা দখল করে তা বন্ধ করে দেয়।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়ার সম্পৃক্ততার প্রমাণ হিসেবে আত্মস্বীকৃত খুনি ফারুক রহমান এবং আব্দুর রশীদের বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারের কথা তুলে ধরেন হাসিনা। 

মোশতাক আহমেদের সঙ্গে জিয়ার যোগসাজশ ছিল দাবি করে তিনি বলেন, “খুনিরসাথে খুনির সখ্য না থাকলে কী সেনা প্রধান করে?”

“মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়া পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছিল। আসলাম বেগের চিঠি থেকেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়।”

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য খালেদা জিয়াকেও দায়ী করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। 

সেইসঙ্গে খালেদার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যোগাযোগ ছিল দাবি করে তিনি বলেন, “পাক সেনাকর্মকর্তা জানজুয়া মারা গেল, তিনি তখন রিটায়ার করেছেন, সে একাত্তরে গণহত্যার সাথে জড়িত- সম্পর্ক কত গভীর থাকলে শোকবার্তা পাঠাতে পারে। আপনারা একটু চিন্তা করবেন?”

জিয়া ও খালেদার ভূমিকা তুলে ধরে হাসিনা বলেন, “কিন্তু, একটি কথা মনে রাখতে হবে। এই বাংলাদেশে পরাজিত শক্তির উত্থান কোনো দিন ঘটবে না। বাংলাদেশের মানুষ তা ঘটতে দেবে না।

“যাদের এত প্রীতি পাকিস্তানের প্রতি। তাদের বলব, পাকিস্তানে চলে গেলেই হয়। বাংলাদেশের মানুষকে জ্বালাবে কেন? বাংলাদেশের মানুষকে কেন কষ্ট দেবে?”

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওই খুনিদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না।

“খুনিদের বিচার করেছি। বিচারের রায় কার্যকর করেছি। আরো যারা আছে, তাদের বিচারের রায় কার্যকর হবে।”

১৫ অগাস্ট খালেদার কেক কাটার সমালোচনা করে হাসিনা বলেন, “বিকৃত চরিত্র ও মানসিকতার না হলে ১৫ অগাস্ট কেউ কেক কেটে জন্মদিন পালন করতে পারে না।

“১৫ অগাস্ট জন্মদিন পালন করে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছিন, খুনিদের সাথে তিনি আছেন। পরাজিত শক্তির সাথে আছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে তিনি বিশ্বাস করেন না।”

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে গত বছর বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংস আন্দোলনের জন্য খালেদাকে ‘খুনি’ বলেও আখ্যায়িত করেন হাসিনা।

“নির্বাচন ঠেকানোর নামে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। খুন করে যেন তার নেশা মেটে না। ঠিক যেভাবে তার প্রভু পাক হানাদার বাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।”

২০০১ সালে ক্ষমতায় বসে বিএনপি চেয়ারপারসন ও তার ছেলে তারেক রহমান একইভাবে খুনকেই ‘একমাত্র কাজ’ হিসেবে স্থির করেছিল বলেও দাবি করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

ওই সময়কালে আওয়ামী লীগ, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, গ্রেনেড-বোমা হামলা চালিয়ে এসএমএস কিবরিয়া ও আহসানউল্লাহ মাস্টারকে হত্যা, ১৭ অগাস্টের বোমা এবং ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার কথাও তুলে ধরেন তিনি। 

“মৃত্যুকে বারবার মুখোমুখি দেখেছি, মৃত্যুভয় আমার নেই। একদিনে মা-বাবা, ভাই হারিয়েছি। যে বাংলার মাটিতে জাতির জনকের খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। সে মাটিতে আমার কী হতে পারে- তা জেনেই ফিরেছি। আমি মৃত্যুকে পরোয়া করি না।”

বিএনপি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিকিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০১ সালে ক্ষমতায় গিয়েছিল দাবি করে হাসিনা বলেন, “আমি আমরা বাবার মেয়ে। দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে হবে- এই শিক্ষা আমি পাইনি।”

শোক দিবসের এই সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে নিজের জীবন এদেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন তিনি।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী ও সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সংসদ সদস্য একেএম রহমতউল্লাহ, ফজলে নূর তাপস ও কামাল মজুমদার প্রমুখ।