গণতান্ত্রিক হতে গিয়ে জাতির পিতা করতে পারিনি: এরশাদ

বহু ক্ষেত্রে একক সিদ্ধান্তে রাষ্ট্র চালালেও ‘গণতান্ত্রিকভাবে’ সবার মতামত নিতে গিয়েই নিজের শাসনামলে বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির পিতা’ ঘোষণা করতে পারেননি বলে মন্তব্য করেছেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2014, 11:00 AM
Updated : 19 August 2014, 11:13 AM

মঙ্গলবার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাবেক এই সামরিক শাসক বলেন, “আমাকে স্বৈরাচার বলা হতো। এককভাবে সব সিদ্ধান্ত নিতাম, তাই নাকি আমি স্বৈরাচার!”

নব্বইয়ের দশকে প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হওয়া এরশাদ স্বীকার করেন, উপজেলা পদ্ধতি চালুর বিষয়টি তার একক সিদ্ধান্তেই হয়েছিল। জেলা বাড়িয়ে ৬৪টি করার সিদ্ধান্তও তিনি একা নিয়েছিলেন।

“হাই কোর্টের একাধিক বেঞ্চ গঠনও আমার একক সিদ্ধান্তে হয়েছিল। জনগণের মঙ্গলের জন্য আমাকে একক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দাবি, কেবল ‘একটি জায়গায়’ তিনি ‘একক সিদ্ধান্ত’ নিতে পারেননি।

“বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা ঘোষণা করার চেষ্টায় আমি একক সিদ্ধান্ত নিইনি, সবার মতামত নিতে চেয়েছিলাম। গণতন্ত্র করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা করতে পারিনি। যদি এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতাম- তাহলে পারতাম।”

ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সংবিধানে ‘জাতির জনক’ ঘোষণা করতে পারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন এরশাদ।

তবে জাতীয় পার্টির আমলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনকার তুলনায় ‘শান্তিপূর্ণ’ ছিল দাবি করে প্রধানমন্ত্রীকে ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার’ আহ্বান জানান তার এই বিশেষ দূত।

এরশাদ বলেন, “আমার আমলে সন্ত্রাস-রাহাজানি ছিল না, সাম্প্রদায়িক হামলা ছিল না। গুম-হত্যাকাণ্ড ছিল না। মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারত।

“এখন পত্রিকা খুললেই দেখি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাস-হত্যা-খুন-রাহাজানি হচ্ছে। মাদকের কারণে আমাদের তরুণ সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ সবই হচ্ছে সুশাসনের অভাবে।”

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “সুশাসনের জন্য প্রয়োজন আইনের শাসন। একজন যদি ঠিক থাকে, তাহলেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আমি প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাব, আপনি বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন; এবার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করুন।”

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য জাতীয় পার্টি প্রধানের কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সল চিশতী, জাতীয় পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কাজল দেবনাথ, এরশাদের রাজনৈতিক ও প্রেস সচিব সুনীল শুভরায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন।