সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না: ফখরুল

নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণে সরকারকে বাধ্য করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2014, 06:52 AM
Updated : 19 August 2014, 02:43 PM

মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২০ দলের সমাবেশে বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেছেন, “এরকম অবস্থায় আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না।

“নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচনের দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করতে হলে আন্দোলনে নামতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে।”

৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের পর এটাই ছিল ঢাকায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রথম সমাবেশ। সমাবেশে খালেদা জিয়ার উপস্থিত থাকার ঘোষণা থাকলেও তিনি অসুস্থতার কারণে যোগ দিতে পারেননি।

বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এলেও সরকারের পক্ষ থেকে তা নাকচ করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে বিএনপির আন্দোলনের সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

ফখরুল বলেন, “বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এই আন্দোলন করছে না। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্যে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার রক্ষা করা। এজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে নামতে হবে।”

এই কথায় সমাবেশে উপস্থিত নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সমর্থন আছে কি না- জানতে চাইলে সবাই সমস্বরে ‘হ্যাঁ’ বলেন।

সমাবেশের সভাপতি ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, “গণ আন্দোলন হওয়ার মতো যথেষ্ট কারণ এখন বিদ্যমান। কালো পতাকা মিছিল ও আজকের সমাবেশই তার বড় প্রমাণ। জনগণ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।”

“জনগণকে দাবিয়ে রাখার সময় শেষ হয়ে গেছে। এসব কাজ থেকে বিরত থাকুন,” সরকারের উদ্দেশে বলেন তিনি।

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে বেলা পৌনে ৩টায় এই সমাবেশ শুরুর এক ঘণ্টা পর মুষলধারে বৃষ্টি নামে। ওই সময় সমাবেশ মঞ্চ থেকে বক্তৃতা চললেও কর্মী-সমর্থকদের অনেককে বৃষ্টিভেজা এড়াতে বিভিন্ন আশ্রয়ে উঠেতে দেখা যায়।

ঢাকার বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুনসহ মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। বিভিন্ন নেতার নামে ডিজিটাল ব্যানারও ছিল।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রটারি জেনারেল আতিকুর রহমানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা কয়েকটি বড় মিছিল নিয়ে যোগ দেন।

সমাবেশে কোনো ধরনের গোলযোগ না ঘটলেও মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কে ছিল ব্যাপক যানজট।

সমাবেশ মঞ্চের ব্যানারে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার নাম লেখা থাকলেও তিনি ছিলেন না।  মঞ্চে তার চেয়ারটি ফাঁকা ছিল।

শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে পারেননি বলে ২০ দলের ঢাকা মহানগর সমন্বয়ক মির্জা আব্বাস জানান। তার নেত্রীর পক্ষ থেকে দুঃখও প্রকাশ করেন তিনি।

“আজকের সমাবেশে দেশনেত্রীর বক্তব্য রাখার কথা ছিল। তিনি টেলিফোনে মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমার সঙ্গে তার কথা হয়েছে। নেত্রীর সঙ্গে কথা থেকে আমার মনে হয়েছে, উনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এজন্য নেত্রী দুঃখ প্রকাশ করেছেন।”

‘অবৈধ সংসদের হাতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা’

জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বাতিলের দাবিতে ডাকা এই সমাবেশে বিএনপি জোটের নেতারা বেশি সোচ্চার ছিলেন সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়ে।

সম্প্রতি মন্ত্রিসভা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করে ১৯৭২ সালের আইন পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে এক ধাপ এগিয়েছে।

এই সংশোধন হলে জিয়াউর রহমান বিচারক অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের যে পদ্ধতি করেছিলেন, তা অবলুপ্ত হবে।  

৫ জানুয়ারির ‘অবৈধ’ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত বর্তমান সংসদের হাতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা গেলে তাতে বিচার বিভাগের ওপর দলীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ফখরুর।  

“যে সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব নেই, শতকরা ৫ ভাগ মানুষও ভোট দেয়নি, ওই রকম সংসদের হাতে ক্ষমতা গেলে আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তই হবে। এভাবেই তারা (সরকার) ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে চায়।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ বলেন, “সংসদের হাতে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়ার সরকারের সিদ্ধান্ত দুরভিসন্ধিমূলক।

“ওই সময়ে (১৯৭৪ সালে চতুর্থ সংশোধনের মাধ্যমে) তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার একদলীয় শাসন বাকশাল করে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ, চারটি ছাড়া সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। বাকশালের মাধ্যমে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল।”

“জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে একদলীয় শাসনের অবসান ও বিচারপতিদের অভিসংশনের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সুপ্রিম জুডিশিয়ালের গঠন করে তাদের হাতে দিয়েছিলেন।”

সম্প্রচার নীতিমালার পর বিচারপতি অভিসংশনের ক্ষমতা সংসদের হাতে নেয়া সবই একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার অংশ বলে দাবি করেন বিএনপির মুখপাত্র ফখরুল।  

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের পায়ের নিচে মাটি নেই। ভোট ছাড়া অন্যায় ও বেআইনিভাবে তারা ক্ষমতায় বসেছে। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে যাতে কেউ কথা বলতে না পারে, সেজন্য এই নীতিমালা করা হয়েছে।

“কেবল সম্প্রচার নীতিমালাই নয়, একের পর এক তারা (সরকার) নিপীড়ন-নির্যাতনমূলক আইন করছে। উদ্দেশ্য ভিন্নমতকে দাবিয়ে রাখা।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী তরিকুল ইসলাম বলেন, “এই সরকার গণমাধ্যমকে ডাণ্ডাবেড়ি পড়াতেই সম্প্রচার নীতিমালা করেছে। এখন তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর হাত দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।”

সমাবেশে বিএনপি নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মাহবুবুর রহমান, আসম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, জমিরউদ্দিন সরকার,  গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মঈন খান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, শওকত মাহমুদ, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, আনোয়ার হোসেন, শিরিন সুলতানা, আবদুল কাদের ভু্ইঁয়া জুয়েল প্রমুখ।

জোট নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এলডিপি‘র অলি আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর মজিবুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিশের মুহাম্মদ ইসহাক, বিজেপি‘র আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টির টি আই  ফজলে রাব্বী, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, এনডিপি‘র খোন্দকার গোলাম মূর্তজা, এনপিপি‘র ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ প্রমুখ।

ঢাকা মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে দলীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, ওসমান ফারুক,  এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল হালিম, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা এম এ আজিজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা আবদুল হাই শিকদার, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান প্রমুখ।