জিয়ার কবরে নেতাদের ধাক্কাধাক্কি-চুলোচুলি

দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে বিএনপির ঢাকা মহানগরের নতুন কমিটির শ্রদ্ধা জানানোর সময় ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে ধমক দিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে হয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের, দেখা যায় নারী নেতাদের চুলোচুলিও।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2014, 10:49 AM
Updated : 24 July 2014, 11:02 AM

মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে নতুন কমিটি গঠনের ছয়দিন পর বৃহস্পতিবার ঢাকার নতুন নেতৃত্বকে নিয়ে শেরে বাংলা নগরে জিয়ার কবরে ফুল দিতে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  

সকাল ১১টার এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে আগে থেকে মিরপুর, পল্লবী, কাফরুল, শাহজাহানপুর, বাসাবোসহ বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে চন্দ্রিমা উদ্যানে জড়ো হতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নতুন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ নেতারা সমাধি প্রাঙ্গণে হাজির হন। এর ১০ মিনিট পরই আসেন মির্জা ফখরুল।

ফুল দেয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের এক পাশে দাঁড়ান গয়েশ্বর রায়। ফখরুলের অন্য পাশে দাঁড়ান মির্জা আব্বাস ও আবদুল আউয়াল মিন্টু।

এই সময় পেছনে দাঁড়ানো নতুন কমিটির সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায়কে ঠেলে ফখরুলের পাশে দাঁড়ালে সৃষ্টি হয় উত্তেজনা।

গয়েশ্বর রাগান্বিত হয়ে চলে যেতে চান। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে সোহেলকে ধমকও দেন তিনি।

তখন ফখরুল ও মির্জা আব্বাস বুঝিয়ে শুনিয়ে গয়েশ্বরের চলে যাওয়া ঠেকান। সোহেলও সরে গিয়ে গয়েশ্বরকে স্থান করে দেন। এরপর সবাই মিলে জিয়ার কবরে ফুল দেন।

দাঁড়ানো নিয়ে এর আগে সাবেক সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মনির সঙ্গে ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাসিমা আখতার কেয়ার কথা-কাটাকাটি হয়। কেয়া সাবেক সাংসদ মনির ওপর চড়াও হয়ে তার চুল ধরে টানতে থাকেন এবং ঘুষিও মারেন।

একই সময়ে মহিলা দলের সভানেত্রী নুরী আরা সাফাকে অন্য এক নারী নেতা ঠেলা দিয়ে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায়।

মহিলা দলের অন্যান্য সদস্যের সামনে এসব ঘটনা ঘটলেও নিজেদের জায়গা ঠিক রাখতে গিয়ে তাদের নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে।

মহানগরের নতুন কমিটির এই কর্মসূচিতে বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে যোগ দেয়।

নতুন কমিটির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল মিন্টু, কাজী আবুল বাশার, আবু সাঈদ খান খোকন, সদস্য বরকত উল্লাহ বুলু, এস এ খালেক, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নাসির উদ্দিন অসীম, আবদুল মজিদ, শামসুল হুদা, সাজ্জাদ জহির, ইউনুস মৃধা, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, আলী আজগর মাতবর প্রমুক।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ, রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শামীমুর রহমান শামীম, শিরিন সুলতানা, হেলেন জেরিন খানও উপস্থিত ছিলেন।

ঠেলাঠেলির কারণে প্রথম দফায় সাংবাদিকদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব কথা বলতে পারেননি। ক্ষুব্ধ হয়ে নেতারা তখন লেকের পাশে গিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফখরুল।

‘বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন’

মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্দলীয় সরকারের দাবিতে তাদের এই আন্দোলন বিজয় না হওয়া পর্যন্ত চলবে।

“সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আমরা গত ৫ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছি। ৫ জানুয়ারি প্রহসনের যে নির্বাচনটি সরকার করেছে, তাতে জনগণ ভোট কেন্দ্রে যায়নি। ঈদের পর আবার আন্দোলন শুরু হবে।”

“আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, আন্দোলন চলবে। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন আমরা চালিয়ে যাব,” বলেন তিনি।

চলমান আন্দোলন জোরদার করতে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে ঢাকার নতুন কমিটি যথার্থ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।

বিএনপির আন্দোলনে জনসমর্থন নেই বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। এর বড় প্রমাণ হচ্ছে- গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে যায়নি। যারা অনৈতিকভাবে ক্ষমতায় বসেছে, তারাই এরকম বক্তব্য দেন।”

মির্জা আব্বাস বলেন, নতুন আহ্বায়ক হিসেবে তার মূল কাজ হচ্ছে ঢাকা মহানগরের কমিটিগুলোকে পুনর্গঠিত করা এবং আন্দোলনে জন্য সংগঠনকে প্রস্তুত করা।

গত শুক্রবার ৫২ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। পাশাপাশি আসম হান্নান শাহ, রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং সাবেক আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা ও সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালামকে নিয়ে ৪ সদস্যের উপদেষ্টামণ্ডলী গঠন করা হয়।

২০১১ সালে ১৪ মে খোকাকে আহবায়ক করে আহবায়ক কমিটিকে ৬ মাসের মধ্যে থানা ও ওয়ার্ডে সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে বলা হলেও তারা তিন বছরে তা পারেনি। আন্দোলন সংগঠনেরও ব্যর্থতার অভিযোগ ওঠে ওই কমিটির বিরুদ্ধে।