ক্ষমতার নয়, গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন: ফখরুল

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের ‘ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার’ লক্ষ্যে ঈদের পর আন্দোলন করবেন তারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2014, 04:30 PM
Updated : 23 July 2014, 04:30 PM

ওই আন্দোলনে যোগ দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বুধবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় ফখরুল বলেন, “সামনে আমাদের পথ মসৃণ নয়। ফ্যাসিবাদী জবরদখলকারী একটি সরকার এদেশের বুকের ওপর চেপে বসে আছে। এদের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

“স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আমরা ক্ষমতার জন্য নয়, জনগণের ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতেই ঈদের পর আন্দোলনে নামব। আমরা ন্যায়ের পথে আছি। আমাদের বিজয় হবেই।”

সরকারের সঙ্গে আপোস করে যারা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে, তাদের ব্যাপারে সর্তক থাকার কথাও বলেন মির্জা ফখরুল।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে হোটেল ইম্পিরিয়ালের কনভেনশন সেন্টারে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ইসলামিক পার্টির ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা ও ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ইফতারের আগে দেশ ও মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশের ১৬ কোটি মানুষ ওই নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। ওই সময়ে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আমাদের ৩১০ জন নেতা-কর্মী প্রাণ দিয়েছে। নির্বাচন বর্জনের ওই আন্দোলনে ৬৫ জনকে গুম করা হয়েছে।

“এতো ত্যাগ ও প্রাণের বিনিময়ের পর যারা বলেন নির্বাচনে না যাওয়াটা ভুল হয়েছে, তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করার মতো কাজ করবেন।”

“সরকারের সঙ্গে আপোস করে কোনোভাবে নির্বাচনে যাওয়ার যারা স্বপ্ন দেখবেন, তারা মীরজাফর-দালাল হিসেবে মানুষের কাছে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন। জনগণ তাদের কখনোই ক্ষমা করবে না।”

সরকারকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, জনগণের রক্ত কখনো বৃথা যায়নি, এবারও যাবে না। এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে অবশ্যই সরে যেতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এদেশে একদিন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।”

ফিলিস্তিনে ইসরাইলের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনিরা যেভাবে অত্যাচারী ইসরাইলি বর্বর বাহিনীর হাতে রক্ত দিচ্ছেন, তেমন অবস্থা চলছে বাংলাদেশেও। রমজান মাসেও মানুষকে হত্যা-গুম করা হচ্ছে। বন্দুকযুদ্ধ ও ক্রস ফায়ারের নাম করে এসব হত্যাকাণ্ড চলছে।

“কেবল তাই নয়, গোটা দেশটাকে ক্ষমতাসীনরা লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। তারা গণতন্ত্র ও ধর্মীয় চেতনার ওপর আঘাত করে ক্ষান্ত হয়নি, ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে।”

উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণে সংসদের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার উদ্যোগের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নিতে সংসদের হাতে বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে। এটা করা হলে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করা হবে।”

১৯৯৬ সালে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এখন তারা ক্ষমতায় গিয়ে বলছে, নির্দলীয় সরকারের প্রয়োজন নেই। ভোটকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারা সুবিধাবাদের মতো এই কথা বলছে। উদ্দেশ্য একটাই, অস্ত্র শক্তিতে কলা-কৌশল করে জনগণকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা দখলে রাখা।’’

ইফতার অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে এক টেবিলে ছিলেন ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান আবদুল মোবিন, সাধারণ সম্পাদক এম এ রশীদ প্রধান, এনপিপির শেখ শওকত হোসেন নিলু, জামায়াতে ইসলামীর রিদওয়ান উল্লাহ শাহিদী, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামী, মুসলিম লীগের নুরুল হক মজুমদার, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ প্রমুখ।

২০ দলীয় জোটের মধ্যে লেবার পার্টির মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, এনডিপির আলমগীর মজুমদার, খেলাফত আন্দোলনের মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, কল্যাণ পার্টির এম এম আমিনুর রহমান, শহিদুর রহমান তামান্না, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) খালেকুজ্জামান চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলনের এ টি এম হেমায়েতউদ্দিন প্রমুখ ইফতারে উপস্থিত ছিলেন।