যুদ্ধাপরাধের বিচারে সংশয়ী না হওয়ার আহ্বান

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া চালু রাখার ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে কোনো ধরনের সংশয় না রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2014, 05:10 PM
Updated : 21 July 2014, 05:10 PM

কর্নেল তাহেরের মৃত্যুবার্ষিকীতে সোমবার তাহের সংসদের আলোচনা সভায় বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের এই নেতা বলেন, এই নিয়ে কোনো ‘আঁতাত’ হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসির এই আলোচনা অনুষ্ঠানে কর্নেল তাহেরের ভাই অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে বিচার নিয়ে সংশয়ের সুর দেখে মন্ত্রী তাকে আশ্বস্ত করেন।

আঁতাতের প্রশ্নে ইনুর কথায় একমত পোষণ করলেও সরকারের ভেতরে সবাই একইভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না বলে মন্তব্য করেন ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি মুনতাসির মামুন।

তার সঙ্গে একমত পোষণ করে অনুষ্ঠানে বক্তব্যে আরেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, সরকারের প্রতি জনসমর্থন অটুট রাখতে হলে এই বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের গত সরকার আমলে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও তাতে এখন তুলনামূলক ধীর গতি দেখে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করছেন।

জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, অধ্যাপক আনোয়ারের প্রবন্ধ ভালো হলেও সেখানে প্রকারান্তরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে একটা প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

“রাজনৈতিক সন্দেহ প্রকাশ করা হয়, সেটা অমূলক, সেটা ভুল। মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁসি দেয়ার দিন শেষ। এখন চলছে রাজাকারদের ফাঁসি দেয়ার সময়। এখানে কোনো মাঝামাঝি পথ নাই। আপনারা অভিযোগ করতে পারেন, কিন্তু মহাজোট সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফেরার অটল সিদ্ধান্ত নিয়ে সামনে এগুচ্ছে।”

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরে ইনু বলেন, “আমরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি। ওরা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি। এই বিপক্ষ শক্তির সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক লেনদেন নয়। জামায়াতের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক লেনদেন সম্ভবই না।”

“আমরা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করব। সাম্প্রদায়িকতাকে বর্জন এবং বাংলাদেশের চেতনায় প্রত্যাবর্তন করব,” বলেন তিনি।

অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, “বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমার মনে হয়নি যে তিনি কোনো আপস করতে পারেন।”

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সরকার প্রধান শেখ হাসিনার অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করার পাশাপাশি সতর্ক হতে বলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন।

“যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব না হলে দেশ গড়ার সংগ্রামও এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা পারব না। কারণ এটা যদি উল্টে যায়, অথবা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ হয়ে গেলে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা যে প্রতিশোধ নিবে সেটা আমরা উপলব্ধিতেও অনুভব করতে পারি না।”

“দেশের পরিস্থিতি খারাপ হলে শুধু প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে আমরা চলতে পারব না,” বলেন এই মন্ত্রী।

আলোচনায় অংশ নিয়ে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটার তুরিন আফরোজ বিচারের দীর্ঘসূত্রতার ব্যাখ্যা দেন।

যুদ্ধাপরাধের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আপিল বিভাগে আলাদা একটি বেঞ্চ গঠনের সুপারিশ করেন তিনি।

কর্নেল তাহের সংসদের সভাপতি হায়দার আকবর খান রনোর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, ডাকসুর সাবেক জিএস মুশতাক হোসেন, আমাদের সময়ে সময়ের সম্পাদক আবু হাসান শাহরিয়ার, কর্নেল তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের, মেয়ে জয়া তাহের নিতু প্রমুখ।