‘ইবাদত নয়, চক্রান্ত করতে উনারা এক হয়েছেন’

সৌদি আরবে ওমরাহ করতে যাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ছেলে তারেক রহমানের যোগ দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2014, 01:10 PM
Updated : 21 July 2014, 02:17 PM

সরকারবিরোধী ‘ষড়যন্ত্রের’ উদ্দেশ্যে তারা মিলিত হয়েছেন বলে মনে করছেন সরকারের এই মন্ত্রী।

ওমরাহ করার উদ্দেশ্যে শনিবার রাতে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন খালেদা জিয়া। দুবাই থেকে একই বিমানে তার সঙ্গে যোগ দেন তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান।

স্থানীয় সময় শনিবার রাত সাড়ে ৩টায় সৌদি আরবের মদিনার আমির মুহাম্মদ বিন আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তারা।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর গ্রেপ্তার তারেক রহমান পরের বছর জামিনে মুক্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান। ডজন খানেক মামলার আসামি তারেক এরপর আর দেশে ফেরেননি।

সৌদি আরবে খালেদা ও তারেকের এই সাক্ষাতের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে সোমবার এক আলোচনা সভায় ইনু বলেন,  “এখন আল্লাহর ঘরে ইবাদত করতে নয়, বরং চক্রান্ত করতে উনারা (খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান) জড়ো হন। এটি কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।”

কর্নেল তাহেরের ৩৮তম মৃত্যুদিবস (তাহের দিবস) উপলক্ষে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত ওই আলোচনা সভায় খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমানকে ‘বেইমান’ বলে অভিহিত করেন  জাসদ সভাপতি ইনু।

ফাইল ছবি

তিনি বলেন, “জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে খন্দকার মোশতাক এবং কর্নেল তাহেরের সঙ্গে জিয়াউর রহমান বেইমানি করে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দূরে সরিয়ে নিতে চেয়েছিল। তারা জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছে।”

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “ওই দিন শেষ। এখন মুক্তিযোদ্ধা আর দেশপ্রেমিকদের আর ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে না। এখন ফাঁসির দড়িতে ঝুলবে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লারা।”

জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘মাজার’-এর বিষয়ে তিনি বলেন, “এটি ষড়যন্ত্রকারীদের তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে ষড়যন্ত্রকারীরা সেখানে জড়ো হয়।

“মাজারটি সেখানে থাকবে কি না সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবেচনা করবেন।”

কর্নেল তাহেরের ফাঁসি প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “কর্নেল তাহেরকে ভুয়া বিচারের নামে নাটক সাজিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। স্বাধীনতার এত বছর পর দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালতে তা প্রমাণিত হয়েছে। জিয়া জনগণ ও আইন দুইয়ের চোখেই অপরাধী।”

আলোচনা সভায় কর্নেল তাহেরের ছোট ভাই ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ার হোসেন বলেন, “কর্নেল তাহের সত্যের পথে সাহসী আর আপোসহীন ছিলেন। তিনি এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। নতুন প্রজন্মকে তার সম্পর্কে জানতে হবে।

“তাহেরকে একটি প্রহসনের বিচারেরর মুখোমুখি করে হত্যা করা হয়েছিল। স্বাধীনতার এত বছর পর সর্ব্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিয়েছে কর্নেল তাহের ছিলেন একজন সত্যিকার দেশপ্রেমিক। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার এখনো কেন রায় বাস্তবায়ন করছেন না?”

কর্নেল তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের বলেন, “তাহেরকে হত্যার আগের দিন তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। আমি ভাবিনি পরদিনই তাকে হত্যা করা হবে। সেসময়ের প্রত্যেকটি দিন এখনও চোখে ভেসে ওঠে।”

কর্নেল তাহেরের রায়ের বাস্তবায়নের বিষয়টি সংসদে তুলে ধরার কথা জানিয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এই সাংসদ বলেন, “৭ নভেম্বরের সিপাহী বিপ্লবের আদর্শ আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এটির জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।”

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে জাসদের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল, সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া, যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেন খান, সাংসদ শিরীন আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।