সাবেক ছাত্রনেতা খ ম ফারুক আর নেই

সাবেক ছাত্রনেতা, ইউকসুর সাবেক ভিপি খন্দকার মোহাম্মদ ফারুক আর নেই। রোববার দুপুরে ব্যাংককে মৃত্যু হয়েছে তার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2014, 12:54 PM
Updated : 29 June 2014, 06:00 PM

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি খন্দকার ফারুকের বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন।

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহিন হোসেন প্রিন্স বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক গিয়েছিলেন খন্দকার ফারুক। অসুস্থ অবস্থায় সেখানে একটি হোটেলেই তিনি মারা যান।

প্রয়াতের ভাগ্নে জোবায়ের মঞ্জির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বছর দু’য়েক আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন খন্দকার ফারুক। তখন কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, মাঝে-মধ্যেই খন্দকার ফারুকের কাশির সঙ্গে রক্ত বের হত। মাসখানেক আগেও একবার ব্যাংককে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। শুক্রবার কাশির সঙ্গে রক্ত বের হলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি ব্যাংককে যান।

“রোববার সকালেও আমাদের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। দুপুরে হোটেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে সেখানেই তিনি মারা যান,” বলেন জোবায়ের।

খন্দকার ফারুকের স্ত্রী ব্যাংককে রয়েছেন। বাবার মরদেহ আনতে বড় ছেলে সোমবার ব্যাংককে যাচ্ছেন বলে জোবায়ের জানান।

গত শতকের ’৮০ এর দশকের সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক খন্দকার ফারুক ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ইউকসু) নির্বাচিত সহসভাপতি ছিলেন।

এরপর ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হন খন্দকার ফারুক। ১৯৮৪ সালে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে বিদায় নিয়ে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। তিনি কাজ করতেন ক্ষেতমজুর সমিতিতে।

গত দুই দশক ধরে রাজনীতিতে প্রায় নিষ্ক্রিয় প্রকৌশলী খন্দকার ফারুক ব্যবসায় যুক্ত হন।  নর ওয়েস্টার ফ্যাশন লিমিটেডের কর্ণধার ছিলেন তিনি।

খন্দকার ফারুকের মৃত্যুতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ শোক জানিয়েছেন।

এছাড়া ছাত্র ইউনিয়ন, ক্ষেতমজুর সমিতি, কৃষক সমিতি, উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠন শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

খন্দকার ফারুকের মৃত্যুতে ছাত্র আন্দোলনে তার সহযোদ্ধারা শোক জানিয়ে বিবৃতিতে বলেছেন,গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল। তৎকালীন ছাত্র আন্দোলনে তার জনপ্রিয়তা ছিল বিস্ময়কর।

ছাত্র ইউনিয়নের এক সভায় খন্দকার মোহাম্মদ ফারুক (ছবি সংগৃহীত)

তাকে স্মরণ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি শহীদ জয়নালের লাশ নিজের কাঁধে বহন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে পুলিশের থাবা থেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ১৯৮৪ সালে যখন সামরিক শাসক এরশাদের ট্রাক মিছিলের ওপর উঠিয়ে দেয়া হয়, তখন তিনি ট্রাকের চাপায় গুরুতর আহত হয়ে অল্পের জন্য বেঁচে যান।”

‘৮২-৯০ স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্রনেতৃবৃন্দ’ ব্যানারে ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মুশতাক হোসেনের পাঠানো এই বিবৃতিতে সই করেছেন আখতারুজ্জামান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ফজলে হোসেন বাদশা, মুনীরউদ্দীন আহমেদ, মিজানুর রহমান মানু, খ ম জাহাঙ্গীর, আনোয়ারুল হক, বাহালুল মজনুন চুন্নু, সুলতান মো. মনসুর, আবদুল মান্নান, শিরীন আখতার, তাহের উল্লাহ, মোস্তফা ফারুক, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মোশরেফা মিশু, বজলুর রশিদ ফিরোজ প্রমুখ।

খালেদা জিয়ার শোক

খন্দকার মোহাম্মদ ফারুকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, “সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। দেশের মানুষ তার অবদান কখনো ভুলে যাবে না।” “

বিএনপি চেয়ারপারসন ফারুকের আত্মার মাগফেরাত ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সাবেক এই ছাত্রনেতার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।