ওসমানদের ‘পাশে’ থাকবেন শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে ওসমানদের ভূমিকা তুলে ধরে বিভিন্ন সমালোচনায় থাকা নারায়ণগঞ্জের এই পরিবারের পক্ষে নিজের অবস্থান জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2014, 01:49 PM
Updated : 3 June 2014, 04:26 PM

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমানের ওপর আলোচনায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এই পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কথাও তুলে ধরে তাদের পাশে থাকবেন বলেও জানিয়েছেন।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নাসিমের ভাই, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানও এই সময় সংসদে ছিলেন।

স্কুলছাত্র তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ড নিয়ে ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমালোচনার মুখেও রয়েছে। সাত খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে অনেকের অভিযোগের মুখে থাকা শামীমকে ‘সন্ত্রাসের গডফাদার’ বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

রাজনৈতিকভাবে ‘হেয়’ করতে ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে দাবি করে সে বিষয়ে জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

নাসিম ওসমানের শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় তার পরিবারের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়ে যায়নি। অনেক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

“কেউ অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য, কোনো পরিবারকে ধ্বংস করার জন্যে যে প্রচেষ্টা এ বিষয়ে জাতিকে সজাগ থাকতে হবে।”

ওসমান পরিবারের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য-এ পরিবারটি বারবার আঘাতের শিকার হয়েছে। আইয়ুব-ইয়াহিয়ার শাসনামলে ও মুক্তিযুদ্ধের সময়, পঁচাত্তর পরবর্তীতে এ পরিবারের ওপর আঘাত হয়েছে। যখন যে সরকার এসেছে কখনো না কখনো এ পরিবারের ওপর হামলা-নির্যাতন করেছে।”

সেলিম ওসমান

শামীম ওসমান

ওসমান পরিবারকে নিয়ে গণমাধ্যমে ‘অপপ্রচারের’ বিষয়টিও তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

“অনেকে থাকে, যারা বারবার আঘাতের লক্ষ্যে পরিণত হয়। অনেকে অনেক অপরাধ করে-তা কেউ দেখে না। কিন্তু, তার থেকে ঘটনাচক্রে কম অপরাধ করেও ঘটনার শিকার হয়। ক্ষেত্র বিশেষে সামান্য কিছু হলে বড় করে লেখা হয়।”

নাসিম ওসমান-শামীম ওসমানের দাদা খান সাহেব ওসমান আলী আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সংগঠকদের অন্যতম। তার বাড়িতেই দল গঠনের প্রথম বৈঠক হয়।

নাসিম-শামীমের বাবা আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য একেএম শামসুজ্জোহা বাংলাদেশের প্রথম সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন।

এক সময় আওয়ামী লীগ করলেও পরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য ছিলেন নাসিম। আওয়ামী লীগ নেতা শামীমও সংসদ সদস্য হয়েছেন একাধিকবার। তাদের অন্য ভাই নাসিমের আসনে আসন্ন উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন।

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি শামসুজ্জোহার দায়িত্ব পালনের বিষয়টি তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা বলেন, “আমরা যখন অসহায় অবস্থায়, আমরা যখন ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিই। ’৭৮ সালে জেলখানা থেকে মুক্ত হয়ে জোহা কাকা কাকীকে আর পরিবারের সদস্যকে নিয়ে দিল্লি গিয়েছিলেন। অল্প যে কয়েকজন আমাদের খবর নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে জোহা কাকা একজন।”

শামসুজ্জোহার একাত্তরের স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে চলে এসেছিলেন ১৮ নম্বরের ওই বাড়িতে, যে বাড়িতে আমাদের বন্দি করে রাখা হয়েছিল। জোহা কাকাসহ কয়েকজন ১৮ নম্বর রোডে যান। বাড়ির ছাদ থেকে গুলি চালায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী। জোহা কাকা গুলিতে আহত হন।”

নাসিম ওসমান

১৫ অগাস্টের আগের দিন নাসিমের বিয়ে হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “নবপরিণতা বধূকে ফেলে রেখে এই হত্যার প্রতিশোধ নিতে নাসিম চলে যায়। কোনো টান তাকে আটকাতে পারে নাই। সে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ নেবে।

“আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছে এই ওসমান পরিবারে। এখানো দল গঠন থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি হয়েছে। রাজনীতির নীতি আদর্শ নিয়ে চলতেন জোহা কাকা। এই পরিবারের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল সব সময়। যদি তাদের প্রয়োজন হয় দেখাশোনা করব।”

শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নাসিম, জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশিদ, মসিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ।

নাসিম ওসমান এবং সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আবুল খায়ের, আব্দুল মান্নান সরদার, মো. আবদুল হাকিম, এ বি এম মূসা, মো. সরওয়ারজান মিয়া, কে এইচ রশীদুজ্জামান, আবদুল আউয়াল মিঞা, খন্দকার শাহবুব উদ্দিন আহমাদ, ইসমাইল হোসেন তালুকদার, আব্দুল হাই, মো. আজাহারুল হক মোল্লা, গুলবদন বেগম, সংসদ সচিবালয়ের সহকারী সচিব মো. মাহবুবুর রহমান এবং দপ্তরী মো. ছামিউল হকের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপিত হয়।

এছাড়া সাবেক জাতীয় অধ্যাপক রঙ্গলাল সেন. ভাষাসৈনিক সাঈদ উদ্দিন, ভাষাসৈনিক মনছুর আহমেদ, ভাষাসৈনিক সাফিয়ার রহমান, ভাষাসৈনিক এ কে এম আজহার উদ্দিন, সঙ্গীতশিল্পী বশির আহমেদ, কবি ও সাংবাদিক ফজল শাহাবুদ্দিনের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করে সংসদ।

চলমান সংসদের কোনো সদস্য মারা গেলে শোক প্রস্তাবের পর অধিবেশন মুলতবি করার রেওয়াজ মেনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বুধবার পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করেন।