লোক মরছে আমার, দায়ও আমাকে: শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জে অপহরণের ঘটনায় মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ বিভিন্ন মহল থেকে ‘পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এ কে এম শামীম ওসমান।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2014, 10:45 AM
Updated : 4 May 2014, 07:05 PM

তার এবং তার দল আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করাই এই ‘অপপ্রচারের’ উদ্দেশ্য বলে দাবি করেছেন এই সংসদ সদস্য।  

কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুলসহ সাতজনকে অপহরণ করে হত্যার পর বিভিন্ন সংবাদপত্রে শামীম ওসমানকে জড়িয়ে খবর ছাপা হচ্ছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় শামীম ওসমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাউন্সিলর নজরুল দীর্ঘদিন আমার সঙ্গে রাজনীতি করেছে। লোক মরছে আমার, আবার আমার ওপরই দায় চাপানোর অপচেষ্টা করছে সিটি মেয়র আইভী।”

অপহরণের আগের দিনও নজরুল দেখা করতে এসেছিলেন বলে শামীম একটি টেলিভিশনকে জানান।

একটি মামলায় নিম্ন আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই গত ২৭ এপ্রিল অপহৃত হন নজরুল। তিন দিন পর তিনিসহ অপহৃত সাতজনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে পাওয়া যায়।

নজরুলের জামিনের বিষয়েও সহায়তার কথা জানান শামীম। নজরুলকে একা চলাচল না করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।

নজরুলের আগে আওয়ামী লীগের নুরুল আমিন মাকসুদকে হত্যা, পারভেজের নিখোঁজ হওয়ার কথাও বলেন শামীম।

“মাকসুদ শামীমের, পারভেজ শামীমের, নজরুলও শামীমের, সব শামীমের। শামীমের লোক শামীম মারবে কেন?”

তিনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হলেই আইভী আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালায়। তারা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে দায় চাপানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত।”

নজরুল অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি নূর হোসেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।

নূর হোসেনের বাড়িতে শনিবার অভিযান চালিয়ে একটি গাড়ি ও ১২ জনকে আটকের পর রোববার শামীমের এক মামাশ্বশুরের কারখানায় অভিযান চালিয়ে সন্দেহজনক একটি প্রাইভেট কার জব্দ করেছে পুলিশ।

শামীম ওসমানের সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কথা হওয়ার পর শিমরাইলে ওই কারখানায় অভিযান চালায় পুলিশ।

নজরুল অপহরণ ও হত্যার ঘটনার কারণ কী মনে করেন- জানতে চাইলে ওই এলাকার সংসদ সদস্য শামীম বলেন, কয়েকটি কারণে হতে পারে। ব্যক্তিগত শত্রুতা, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট এবং তার (শামীম ওসমান) ক্ষতি করার উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

“এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিচের লেভেলের অসাধু কোনো কর্মকর্তা জড়িত কি না, তাও খতিয়ে দেখা দরকার।”

সরকারদলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, “র‌্যাব নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এমনও তো হতে পারে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু কোনো কর্মকর্তা বিশাল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই কাজটি করে থাকতে পারেন। এতে করে তারা নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হল এবং সরকারকেও বিব্রত অবস্থায় ফেলা হল।”

তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, “সর্ষের মধ্যে যেমন ভূত থাকে, সাংবাদিকদের মধ্যে যেমন হলুদ সাংবাদিক, পুলিশের মধ্যে অসাধু পুলিশ, তেমনি র‌্যাবের মধ্যে অসাধু কর্মকর্তাও রয়েছে।”

নজরুল অপহরণের পর সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে র‌্যাবের অতিরিক্ত পরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানকেও বিষয়টি জানিয়েছিলেন এই সংসদ সদস্য।

“র‌্যাবের এডিজি কর্নেল জিয়াউল গভীরভাবে বিষয়টি দেখছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে তিনি আশ্বস্তও করেন।”

এই ঘটনার তদন্তকারীদের জামায়াতে ইসলামীর তৎপরতা এবং ২০০১ সালের জুন ১৬ জুন চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বোমা হামলার ঘটনাটিও মাথায় রাখার পরামর্শও দেন শামীম ওসমান।