নিরাপত্তার দাবিতে রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়ে সঙ্গে জনগণকে পাওয়ার প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
নারায়ণগঞ্জে অপহৃত সাতজনের লাশ উদ্ধারের প্রেক্ষাপটে মে দিবসে বৃহস্পতিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে খালেদার বক্তব্যে গুম-খুনের বিষয়টিই প্রাধান্য পায়।
ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বিএনপি ও ১৯ দলের নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
“আমি সারাদেশে সাংগঠনিক রেড এলার্ট জারি করছি। ডাক দিলে চলে আসবেন। একত্রে থাকবেন, গুম-অপহরণ রুখে দাঁড়াবেন।”
সারাদেশে তুলে নেয়ার অধিকাংশ ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ঘটছে বলে ভুক্তভোগীদের বক্তব্যে আসায় এসব ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের পরিচয় প্রকাশের দাবি জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
“আগে রক্ষী বাহিনী, লাল বাহিনী, নীল বাহিনী গুম করত। এখন সাদা পোশাকে কারা এরা? পত্রিকায় দেখা যায়, র্যাবের পোশাকে, সাদা পোশাকে অপহরণকারীরা মানুষদের গুম করছে।”
“পুলিশ হোক, র্যাব হোক, কাউকে ছাড় দেবেন না। ঘেরাও করে আটকে রাখবেন। নিরাপরাধ লোকদের ছাড়িয়ে আনবেন এবং ওই লোকদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন,” জনগণের প্রতি আহ্বান জানান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভবিষ্যতে জবাব দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
“নারায়ণগঞ্জের এই অবস্থার জন্য দায়ী এই অবৈধ সরকার। এতদিন তারা নিখোঁজ থাকলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন তাদের খুঁজে বের করতে পারল না? কেন লাশ পাওয়া গেল? এর জবাব দিতে হবে হাসিনাকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন পারল না?”
“আজ নদীতে একের পর এক লাশ ভেসে উঠছে। আমরা জানতে চাই, ইলিয়াস আলী কোথায়? তাকে পাইনি, আর আজ উল্টো শুধু লাশ আর লাশ।”
গুম-খুনে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের (আওয়ামী লীগ) লোকগুলোই এই কাজ করেছে। এখন পর্যন্ত একটা লোক ধরা পড়ে নাই।”
বক্তব্যের এই পর্যায়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘রক্তপিপাসু ড্রাকুলা’ বলেও আখ্যায়িত করেন তিনি।
“এই সরকার ড্রাকুলা সরকার, রক্তপিপাসু; এই সরকার চোর এবং খুনি। তারা সাদা বিড়াল, কালো বিড়াল, রক্ত পিপাসু, ড্রাকুলা সরকার।”
নিরাপত্তার দাবিতে রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়ে খালেদা বলেন, “আমিও জনগণের নিরাপত্তার জন্য রাজপথে নামব।
বিএনপির দাবি, গত এক বছরে তাদের ৩১০ জন নেতা-কর্মী গুম অথবা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
খালেদার দাবি, সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাতে সক্রিয় হতে না পারে, সেজন্য পরিকল্পিতভাবে তরুণদের গুম করা হচ্ছে।
“এদের পরিকল্পনা সুদূরপ্রসারী। তাদের টার্গেট হল যুবকরা। তারা জানে যুবকরাই একসময় বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। তাই দেশের যুবকদের ধ্বংস করে তারা বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দিতে চায়।”
বর্তমান সরকারকে অবৈধ আখ্যায়িত করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “৫ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি। সেদিন ভূত আর জিন ভোট দিয়েছে।”
এই সরকারকে ‘ক্রীতদাসের’ সরকার আখ্যায়িত করে নিজের এই বক্তব্যের ব্যাখ্যাও দেন তিনি।
“দাস অন্তত প্রভুর অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করতে পারে, কিন্তু ক্রীতদাস সেটাও পারে না। আওয়ামী লীগের সরকার ক্রীতদাস। এরা প্রভুর কাজের প্রতিবাদ করতে পারে না।”
“সীমান্তে যখন ফেলানীর লাশ ঝুলে থাকে তখন তারা প্রতিবাদ করতে পারে না। সীমান্তের ভেতরে ঢুকে যখন বিএসএফ বাংলাদেশিদের গুলি করে মেরে ফেলে, তখন এরা প্রতিবাদ করতে পারে না। আমাদের সীমান্তের ভেতরে এসে ধান কেটে নিয়ে যায়, তখনো প্রতিবাদ করতে পারে না।”
বিএনপির সঙ্গে জঙ্গিবাদীদের সম্পর্ক রয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের জবাবে খালেদা বলেন, “আমরা জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করি না, আমরা গণতান্ত্রিক দল। নামাজ পড়লে, টুপি পড়লে কি জঙ্গি হয়ে যায়?
“জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পর্ক কার- তা আজ বেরিয়ে এসেছে। কয়েক জঙ্গি পালিয়ে গেল- তাদের কারা সহায়তা করেছিল? যুবলীগের নেতা ছিল-কর্মী ছিল।”
“আবদুর রহমান (মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জেএমবি নেতা) কার আত্মীয় ছিল- মির্জা আজমের । মির্জা আজম কি বিএনপি করে? আওয়ামী লীগ করে।”
“এই সরকার রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছিল, তা দেয়নি। এরা কথায় কথায় মিথ্যা বলে। তাই দেশের মানুষ এদের কথা এখন আর বিশ্বাস করে না।”
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবসের এই সমাবেশের শুরুতেই রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৩টায় শুরু হওয়া এ সমাবেশে খালেদা দেড় ঘণ্টা পর উপস্থিত হন। তিনি পৌঁছলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা তাকে স্লোগান ও করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানায়।
সমাবেশমঞ্চে উঠেই রানা প্লাজায় আহত কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে তাদের সান্ত্বনা দেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, সাদেক হোসেন খোকা, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।