দুই মামলায় খালেদার বিচার চলবে

দুর্নীতির দুই মামলায় বিচারিক আদালতে অভিযোগ গঠন বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2014, 09:49 AM
Updated : 23 April 2014, 03:56 PM

ফলে জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট্রের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের বিচার চলবে।

গত ১৯ মার্চ ঢাকার জজ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে করা এই দুই মামলায় খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ২১ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন ঠিক করেছিলেন।

কিন্তু এই অভিযোগ গঠনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে আসা বিএনপি চেয়ারপারসন এর  প্রক্রিয়ার আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে উচ্চ আদালতে আসেন।

তিনি হাই কোর্টে রিভিশন আবেদন করলে তিন দিন শুনানির পর বুধবার বিচারপতি বোরহানউদ্দিন ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ তা খারিজ করে দেন।

আদালতের আদেশে বলা হয়, অভিযোগ গঠন করে মহানগর দায়রা জজ বিশেষ আদালত-৩ গত ১৯ মার্চ যে আদেশ দিয়েছেন, তাতে দেখা যায়, আবেদনকারীকে (খালেদা জিয়া) অভিযোগ পড়ে শোনানোর পর তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। একারণে আবেদনের সারবত্তা নেই। তাই তা খারিজ করা হলো।

আদেশের আগে মামলার পুরো ইতিহাস তুলে ধরে আদালত। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী, রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল ও দুদকের আইনজীবীর বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়।

আদেশের পর আদালত থেকে বেরিয়ে খালেদার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এই আদেশে তারা ‘হতাশ ও হতবাক’।

“আমরা বলেছিলাম ট্রাস্ট আইনের মামলা, তাই ট্রাস্ট আইনে বিচার হবে। কিন্তু নিম্ন আদালত নিয়ম লঙ্ঘন করে অভিযোগ গঠন করেছে। বিচারক এজলাসে না এসে অভিযোগ গঠন করেছে। অভিযোগ গঠনের আগে বেগম খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি।”

“কিন্তু আদালত অভিযোগ গঠন বিষয়ে নিম্ন আদালতের আদেশ বিশ্বাস করে আমাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। আমরা এ আদেশে হতাশ ও হতবাক।”

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব বলেন, “আজ (বুধবার) আদালতে ঢোকার আগে গেইটে অসংখ্য পুলিশ মোতায়েন দেখলাম। তাতে রায় কী হবে, তা বুঝতে বাকি থাকে না।”

পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে আপিল করবেন বলে জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা।

খালেদার পক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনও ছিলেন।

“আমরা বিস্মিত। খালেদা জিয়া হাই কোর্টে ন্যায়বিচার পাননি,” বলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক খোকন।

অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, “আইন অনুসারে যথাযথভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হল। এখন নিম্ন আদালতে এ মামলায় বিচার চলতে আইনগত কোনো বাধা নেই।”

অভিযোগ গঠনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ওই আদেশ বাতিল চেয়ে গত ১৩ এপ্রিল হাই কোর্টে দায়ের করা রিভিশন আবেদনে খালেদা বলেছিলেন, ‘যথাযথভাবে’ ওই অভিযোগ গঠন করা হয়নি।

অভিযোগ গঠনের আগেও নানা যুক্তিতে উভয় মামলা বাতিলে বিএনপি চেয়ারপারসন উচ্চ আদালতে এসেছিলেন। তবে কোনোটিতেই তিনি সফল হতে পারেননি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকনের দাবি করেছিলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪১(১) ধারা অনুসারে অন্য যে কোনো আসামির মতো খালেদা জিয়া অব্যাহতির আবেদন করেছিলেন। তার সেই আবেদনের শুনানি না করেই অভিযোগ গঠন করা হয়।

গত ১৯ মার্চ জজ আদালতে খালেদা জিয়া

“অভিযোগ গঠনের পূর্বে তার অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়নি। তিনি দোষী নাকি নির্দোষ, সেটা খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। বিচারক খাস কামরায় বসে পেশকারের মাধ্যমে অভিযোগ গঠনের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন মাত্র। এভাবে অভিযোগ গঠন ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪২ ধারা লংঘন।”

তিনি বলেছিলেন, অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার জব্দ তালিকায় কোথাও ওই ট্রাস্ট্রের কার্যক্রমে খালেদার স্বাক্ষর রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই এখানে খালেদাকে আসামি করা ঠিক হয়নি।

“আর চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট মামলায় সরকারের কোনো টাকা নেই। এটা দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। জমি কেনায় টাকা কম দেখিয়ে মাসুল ফাঁকি দিলে ডিসি মাসুলের টাকা চাইতে পারেন।”

অন্যদিকে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, অভিযোগ গঠন যথাযথ হয়নি বলে যে দাবি করা হয়েছে, নিম্ন আদালতের আদেশটি পড়লেই তা ভিত্তিহীন বোঝা যায়।

“আর খালেদার বিরুদ্ধে এ সব মামলা চলতে পারে কি-না, তা আগেই হাই কোর্টে মীমাংসা হয়ে গেছে। তারা এসেছিলেন, তাদের আবেদন খারিজ হয়ে গেছে।”

অরফ্যানেজ (এতিমখানা) ট্রাস্ট মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে খালেদা, তারেকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে। আর জিয়া চ্যারিটেবল (দাতব্য) ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসামি হিসাবে রয়েছেন আরো তিনজন।

এতিমখানা ট্রাস্ট মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

এদের মধ্যে সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আছেন জামিনে। তারেক উচ্চ আদালতের জামিনে গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। বর্তমানে তিনিসহ বাকি দুজন পলাতক।

দাতব্য ট্রাস্ট মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে। খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন।

২০১১ সালের ৮ অগাস্ট জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়।

তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে। ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট এই মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়।

এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়।