তিস্তায় পানি লং মার্চের সফলতা: ফখরুল

গত কিছু দিন ধরে ধুকতে থাকা তিস্তা নদীতে হঠাৎ পানির প্রবাহকে বিএনপির লং মার্চের সাফল্য বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সুমন মাহমুদ লং মার্চের গাড়িবহর থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2014, 03:10 PM
Updated : 22 April 2014, 04:05 PM

তিস্তায় পানি সঙ্কট সমাধানের দাবিতে দুদিনব্যাপী লং মার্চের প্রথম দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধায় পথসভায় বক্তব্যে এই দাবি করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।

এই কর্মসূচি বুধবার নীলফামারীর গজলডোবায় তিস্তা ব্যারেজে গিয়ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। রংপুরে রাত কাটিয়ে সকালে শেষ গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হবে লং মার্চ।

শতাধিক গাড়ি নিয়ে ঢাকার উত্তরা থেকে যাত্রা শুরু করে গাজীপুরের কালিয়াকৈর, টাঙ্গাইলের বাইপাস সড়ক, সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়, বগুড়ার মাটিঢালী, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের পর পলাশবাড়ীতে সবশেষ পথসভা করেন ফখরুল।

গোবিন্দগঞ্জের পথসভায় ফখরুল বলেন, “গত বছর তিস্তা নদীতে ২৫শ কিউসেক পানি আসতো। এবার একই মৌসুমে এসেছে মাত্র ৪শ কিউসেক পানি।

“আমরা শুনেছি, আজ তিস্তার পানি প্রবাহ ১৬শ কিউসেকে উন্নীত হয়েছে। আমরা মনে করি, এটি লংমার্চ কর্মসূচির কারণেই হয়েছে। এটা আমাদের প্রাথমিক সফলতা।”

চলতি শুকনো মৌসুমে তিস্তার পানি কমতে কমতে দৈনিক গড়ে ৫০০ কিউসেকে দাঁড়ায়।

সোমবার সারাদিন ৮৩০ কিউসেক পানি থাকলেও মঙ্গলবার সকালে তা বেড়ে ৩ হাজার ছয় কিউসেকে দাঁড়ায় বলে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান জানিয়েছেন।

বিএনপি অভিযোগ করে আসছে,ভারত তিস্তার নদীর উজানে ১৪টি বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় অভিন্ন এই নদীর প্রাপ্য হিস্যা বাংলাদেশ পাচ্ছে না।

ভারতের কাছে ‘নতজানু’ বর্তমান সরকার পানি আনতে পারবে না দাবি করে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় পাঠাতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।

পলাশবাড়ীর সমাবেশে তিনি বলেন, “এই সরকার ট্রানজিটের মতো দরকষাকষির হাতিয়ারটি ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। ফলে তাদের পক্ষে তিস্তার পানি চুক্তি সম্পাদন কিংবা পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করা সম্ভব নয়।

“তাদের (সরকার) আজ কোনো গণভিত্তি নেই। এখন তিস্তায় পানি আনতে হলে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

এজন্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করতে আন্দোলনে নামতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।

দুই বছর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে তা আটকে যায়।

এরপর বারবার তাগিদ দিয়ে ব্যর্থ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার এখন আশা করছে, ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচনের পর নতুন সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হবে।

ভারতের বিষয়ে ফখরুল বলেন, “আমরা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। তবে এটা হতে হবে সমতার ভিত্তিতে। তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। তিস্তার পানি পাওয়া আমাদের অধিকার, এটা কেনো দয়া-দাক্ষিণ্য নয়।”

ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

টাঙ্গাইলের পথসভায় ফখরুল বলেন, “আমাদের এই লং মার্চ ভারত সরকারকে চাপ সৃষ্টি এবং দেশের জনগণকে সচেতন করার জন্য।”

বিএনপির লং মার্চের গাড়িবহর

সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপির প্রথম বড় ধরনের এই কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগম ঘটানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন দলটির নেতারা। সে লক্ষ্যে পথে পথে পথসভা করা হয়।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর, টাঙ্গাইলের বাইপাস মোড়, সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়ের জনসমাগম কম ছিল। তাপদহের মধ্যে দুপুরে জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়ার মটিঢালির পথসভায় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি আগের অন্য কর্মসূচির মতো দেখা যায়নি।

তবে সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন পথসভায় বিএনপির স্থানীয় নেতারা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ তাদের মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে এবং ব্যানার-ফেস্টুন ছিড়ে কর্মীদের ভয় দেখিয়েছে।

গোবিন্দগঞ্জের যাওয়ার পথে জয়পুরহাটের মোকামতলায় রাস্তার দুই ধারে খালি কলসী নিয়ে দাঁড়িয়ে নেতা-কর্মীরা লং মার্চকারীদের স্বাগত জানায়।

গাজীপুর মহানগরীর বোর্ডবাজারে লং মার্চে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আঙ্গুর, ডাব, আপেল, বিস্কুট ও বোতলজাত পানি বিতরণ করে স্বেচ্ছাসেবক দলের স্থানীয় নেতারা।

ফখরুলের নেতৃত্বে এই লং মার্চে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে রয়েছেন নজরুল ইসলাম খান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান,ওসমান ফারুক, আবদুল মান্নান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম, আসাদুজ্জামান রিপন, নাজিম উদ্দিন আলম, খায়রুল কবীর খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শামীমুর রহমান শামীম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সোহরাব উদ্দিন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।

সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে রয়েছন নুরী আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, শফিউল বারী বাবু, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, আবদুল মালেক, শাহ নেসারুল হক, বজলুল করীম চৌধুরী আবেদ, ওবায়দুল করীম নাসির, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, শামা ওবায়েদ, সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, হারুন অর রশীদ প্রমুখ।