রোববার বিচারপতি বোরহানউদ্দিন ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চে শুনানির পর আদেশের এই দিন ঠিক করেছে।
গত রোববার এই বেঞ্চে খালেদার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন আবেদনটি দাখিল করেন। এরপর তিন দিন শুনানি চলে।
খালেদার পক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন, মওদুদ আহমদ, এজে মোহাম্মদ আলী শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে করা দুই মামলায় গত ১৯ মার্চ ঢাকা জজ আদালতে খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়।
ওই অভিযোগ গঠনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাই কোর্টে আসেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ‘যথাযথভাবে’ ওই অভিযোগ গঠন করা হয়নি দাবি করে এই ‘রিভিশন’ আবেদন করা হয়।
আবেদনে ওই দুই মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না- সেই রুল চাওয়া হয়। পাশাপাশি রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় অভিযোগ গঠনের আদেশের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়। আবেদনের যথার্থতা পরীক্ষা করতে দুই মামলার রেকর্ড তলবের আর্জিও জানান খালেদা।
মাহবুব উদ্দিন খোকনের দাবি, ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪১(১) ধারা অনুসারে অন্য যে কোনো আসামির মতো খালেদা জিয়া অব্যাহতির আবেদন করেছিলেন। তার সেই আবেদনের শুনানি না করেই অভিযোগ গঠন করা হয়।
“অভিযোগ গঠনের পূর্বে তার অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়নি। তিনি দোষী নাকি নির্দোষ, সেটা খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। বিচারক খাস কামরায় বসে পেশকারের মাধ্যমে অভিযোগ গঠনের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন মাত্র। এভাবে অভিযোগ গঠন ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪২ ধারা লংঘন।”
“আর চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট মামলায় সরকারের কোনো টাকা নেই। এটা দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। জমি কেনায় টাকা কম দেখিয়ে মাসুল ফাঁকি দিলে ডিসি মাসুলের টাকা চাইতে পারেন।”
অন্যদিকে শুনানিতে মাহবুবে আলম বলেন, অভিযোগ গঠন যথাযথ হয়নি বলে যে দাবি করা হয়েছে, নিম্ন আদালতের আদেশটি পড়লেই তা ভিত্তিহীন বোঝা যায়।
অরফ্যানেজ (এতিমখানা) ট্রাস্ট মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে খালেদা, তারেকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে। আর জিয়া চ্যারিটেবল (দাতব্য) ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসামি হিসাবে রয়েছেন আরো তিনজন।
এতিমখানা ট্রাস্ট মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
এদের মধ্যে সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আছেন জামিনে। তারেক উচ্চ আদালতের জামিনে গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। বর্তমানে তিনিসহ বাকি দুজন পলাতক।
দাতব্য ট্রাস্ট মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে। খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন।
২০১১ সালের ৮ অগাস্ট জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়।
তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে। ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট এই মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়।