‘জিয়া প্রথমে নিজেকে রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন’

মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ বলেছেন, একাত্তরের ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের সময় জিয়াউর রহমান নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দাবি করেছিলেন, যা পরে সংশোধন করা হয়েছিল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2014, 04:27 PM
Updated : 17 April 2014, 05:42 PM

জিয়াকে প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করে তার ছেলের তারেক রহমানের বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের মধ্যে বৃহস্পতিবার মুজিবনগর দিবসে ঢাকায় এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।

আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সফিউল্লাহর বক্তব্য অনুযায়ী, একাত্তরের ২৬ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নানের কণ্ঠে তিনবার ঘোষণাপত্র পাঠের পরদিন জিয়া তা পাঠ করেন এবং নিজেকে রাষ্ট্রপতি দাবি করেন।

“এরপর সেখানে উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং আমরা তার প্রতিবাদ জানালে পরদিন ২৮ তারিখ সে আবার (ঘোষণপত্র) পাঠ করে এবং ওই দিন সে বলে যে ‘আই অন বিহাফ অফ বঙ্গবন্ধু..।”  

মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের অধিনায়ক জিয়ার বিষয়ে এস ফোর্সের প্রধান সফিউল্লাহ এই বক্তব্য দিলেও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বেলাল মোহাম্মদের কথা ভিন্ন।

প্রয়াত বেলাল মোহাম্মদ ২০১০ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে যে তথ্য জানিয়েছিলেন, তাতে জিয়ার নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বক্তব্য দেয়ার কথা নেই।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সফিউল্লাহ বলেন, “আমরা তখন ভেবেছিলাম সে (জিয়া) ভুলবশত ‘অন বিহাফ অব বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি বলেনি। ভুল হতেই পারে। এছাড়া নিজের জীবদ্দশায় সে কখনোই বলেনি যে সে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি।

“এমনকি, ১৯৭৪ সালে বিচিত্রায় একটি আর্টিক্যাল লিখেছিল জিয়া, যেখানে সে দাবি করেছিল, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণই ছিল ওই সময়ের বাঙালি সামরিক কর্মকর্তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার মূল স্পিরিট।”

বেলাল মোহাম্মদ বলেছিলেন, “আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবীদের বলতে দেখি প্রথমে নাকি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর নাম বলেন নাই। তখন প্রেশার দিয়ে নাম দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলে তারা নিজেদের উদ্যোগে নিয়ে এসেছে। আপনারা যদি নিজেরাই নিয়ে আসেন, তা হলে বঙ্গবন্ধুর নাম বলেন না কেন?”

বেলাল মোহাম্মদের বক্তব্য অনুযায়ী, কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের যাত্রা শুরুর পর্যায়ে তার সঙ্গে ছিলেন আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, আবদুল্লাহ আল ফারুক, কাজী হাবীবউদ্দিন,আমিনুর রহমান, সারফুজ্জামান প্রমুখ।

“রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে একমাত্র এম এ হান্নান একদিন এসেছেন, পরে আর কোনোদিন আসেননি। তিনি ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতাও আসেননি।”

জিয়াকে কালুরঘাটে আনতে নিজের তৎপরতার কথা তুলে ধরে সফিউল্লাহ বলেন, তারা প্রথমে মেজর রফিকুল ইসলামের (বর্তমানেসংসদ সদস্য) কাছে গিয়ে বিফল হন।

“আমরা ওই দিনই ষোলশহরে গেলাম এবং গিয়ে শুনলাম জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস তদারক করতে সে (জিয়া) পোর্টে গিয়েছে। জিয়া তখন জেনারেল জানজুয়ার ব্যাটালিয়নের একজন কর্মকর্তা ছিল।”

“তাকে তলব করার জন্য লেফটেন্যান্ট খালেকুজ্জামানকে পাঠানো হয়। খালেকুজ্জামান খবর দিলে জিয়া প্রথমে বোয়ালখালী যান। তারপর বোয়ালখালী থেকে ফিরে এসে ২৭ তারিখ সন্ধ্যায় ১ম বার স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।”

বেলাল মোহাম্মদের বক্তব্য অনুযায়ী, পটিয়া গিয়ে তিনি জিয়ার সঙ্গে দেখা করে তাকে কালুরঘাট নিয়ে এসেছিলেন।

তারেকের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ বলেন, এর মধ্য দিয়ে এটা শুধু ইতিহাস বিকৃতিই নয়, মানুষকে কুপথে নেয়ার চক্রান্ত।

“হতে পারে, তারা ওই প্রথম বারের ঘোষণা পাঠের বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। এটা ঠিক এখানে এমন কিছু চক্র কাজ করছে যারা মুক্তিযুদ্ধের সব ইতিহাস মুছে ফেলতে চায়।”

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এই আলোচনা সভায় সফিউল্লাহ ছাড়াও ছিলেন মুক্তিবাহিনীর উপঅধিনায়ক এ কে খন্দকার, সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম প্রমুখ।