জিয়াই প্রথম রাষ্ট্রপতি: খালেদা

ছেলে তারেক রহমানের পর খালেদা জিয়াও স্বামী জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বলে দাবি করেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2014, 01:53 PM
Updated : 27 March 2014, 06:54 PM

স্বাধীনতা দিবসে উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি এই দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ তোলেন।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য খালেদা জিয়াকেও সম্মাননা দেয়া হয়। স্বামী জিয়াউর রহমানকে দেয়া সম্মাননা স্মারকও নেন তিনি।

বিএনপিকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দাবি করে দলের চেয়ারপারসন খালেদা বলেন, “তারা যতই বলুক, কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস হচ্ছে, স্বাধীনতার ঘোষক ও প্রথম রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান।

“স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বলেই আওয়ামী লীগ জিয়াকে ভয় পায়। সেজন্য তারা ওই ঘোষণাকে স্বীকৃতি দিতে চায় না।”

একদিন আগে তারেক লন্ডনে বিএনপির এক সভায় বলেন, জিয়াউর রহমানই ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি।

একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের উষালগ্নে জিয়ার পাঠ করা স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্থপতি প্রয়াত বেলাল মোহাম্মদের ভাষ্য, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন তৎকালীন মেজর জিয়া

বিএনপির ওয়েবসাইটেও জিয়াকে দেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখানো হয়েছে।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক পালাবদলের এক পর্যায়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে আসেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের একজন জিয়া। সামরিক আইনের বলে শাসনের পর রাষ্ট্রপতিও হন তিনি।

বিএনপি জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করলেও তা না বলার নির্দেশ রয়েছে বাংলাদেশ হাই কোর্টের।

মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসিত করার জন্য জিয়াকেই দায়ী করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।  

জনগণের ‘প্রয়োজনেই’ জিয়াকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে হয়েছে দাবি করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা বলেন, “আমি রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়া থেকে স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি।”

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেন, “এটাই সত্য জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে। ঘোষণার সময়ে আমি তার পাশে ছিলাম। ওই সময় হান্নান-মান্নান চকির তলে লুকিয়ে ছিলেন।”

স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগও করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

“তারা (আওয়ামী লীগ) স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেরণা যুগিয়েছে, এই অবদানের কথা আমরা অস্বীকার করছি না। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আওয়ামী লীগের নেতারা সীমান্তের এপার-ওপার করেছে।”

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার কুণ্ঠিত বলে দাবি করেন তিনি।

“দেশের কৃষক, শ্রমিক, সৈনিক, জনতা মিলে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, এই কৃতিত্ব তাদেরই। কিন্তু সরকার তাদের কৃতিত্ব না দিয়ে অন্যদের তথা বিদেশিদের অবদানকে বেশিভাবে সম্মান দিচ্ছে। অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের যথার্থ স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে না।”

খালেদাকে সম্মাননা

মুক্তিযোদ্ধা দল জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে বিশেষ সম্মাননার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য খালেদাকেও সম্মাননা দেয়।

একাত্তরের স্মৃতি তুলে ধরে অনুষ্ঠানে জিয়ার স্ত্রী বলেন, “আমার এবং আমার পরিবারের ওপর অনেক অত্যাচার হয়েছে। কিন্তু অন্যায়ের কাছে আমি কখনো মাথা নত করিনি, করব না।”

একাত্তরের মার্চে জিয়ার নেতত্বে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহের কথা তুলে ধরে খালেদা বলেন, “তিনি (জিয়া) যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন, এর আগে হাবিলদার আবদুল কাদের আমাদের বাসায় এসে বললেন, ‘স্যার কোথায়?’।

“আমি তাকে বললাম, তিনি নেই। তখন তারা বলল, ‘আমাদের ক্যান্টনমেন্টে বাঙালি সৈনিকদের অস্ত্র সমর্পণ করতে বলেছে। আমরা কী করব।’ তখন আমি বললাম, জিয়াউর রহমান না আসা পর্যন্ত কেউ যেন অস্ত্র সমর্পণ না করে।”

জিয়া মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম থেকে গোপনে জলপথে স্টিমারে করে দুই সন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানকে নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার কথা জানান খালেদা।

ঢাকায় ঢোকার পর গ্রেপ্তার হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আটক থাকা অবস্থায় মাঝে-মধ্যে তার বড় বোনকেই শুধু দেখা করার সুযোগ দেয়া হত।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে বিজয়ের আগে ঢাকার সেনানিবাসে গোলাবর্ষণের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি দুই সন্তান নিয়ে যে কক্ষটিতে বন্দি ছিলাম, সেখানে একটি বোম্বিং হয়। আমি তখন দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে খাটের নিচে লুকাই।

“ওই দিনের বোম্বিংয়ে ওই কক্ষটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। খাটের নিচে থাকার কারণে আমরা বেঁচে যাই। এরপর পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের আরেকটি মেসে নিয়ে বন্দি করে রাখে।”

অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও একজন মুক্তিযোদ্ধা, যাকে পাকিস্তানি সৈন্যরা মে মাসে বিভিন্ন বাড়িতে হানা দিয়ে গ্রেপ্তার করে। আজ আমরা এই মুক্তিযোদ্ধাকে সন্মান জানাতে চাই।”

অনুষ্ঠানে বিবিসির সাংবাদিক সিরাজুর রহমান, জেড ফোর্সের মুক্তিযোদ্ধা অনাররী ক্যাপ্টেন আবদুল হাই বীর প্রতীক ও আবুল হাশেম বীর বিক্রম, ২ নম্বর সেক্টারের মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা আলমতাজ বেগম ছবিকে সম্মাননা দেয়া হয়।

ক্যান্সারে আক্রান্ত আলমতাজ ছবি ও রিকশাচালক মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাকে নগদ ১ লাখ টাকা দেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

‘মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ অহংকার স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান বীরউত্তম’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানটি শুরু হয় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে।

এ সময়ে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান। এরপর একাত্তরের ৭ বীর শ্রেষ্ঠসহ শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত হয়।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পলিসি ফোরাম ক্যামব্রিজের নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম, একাত্তরের ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য সাদেক হোসেন খোকা, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, আইন উদ্দিন বীরপ্রতীক, ফজলুর রহমান, ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল বক্তব্য রাখেন।

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন শরিফ এম এ বাবুল। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম শফিউজ্জামান খোকন, সহসভাপতি আবুল হোসেন, আবেদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দলের সভানেত্রী শামা ওবায়েদও বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা আর এ গনি, রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, আহমেদ আজম  খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মারুফ কামাল খান, শাহ মো. আবু জাফর, নাজিমউদ্দিন আলম, নুরী আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামসুল হুদা, হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আখতার, সুলতানা আহমেদ।