পাবনায় দু’শতাধিক জামায়াত নেতাকর্মী আ. লীগে

পাবনায় সরকারদলীয় সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্সের উপস্থিতিতে দুই শতাধিক কর্মীসহ আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন এক ইউনিয়ন জামায়াতের নায়েবে আমির।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2014, 04:26 PM
Updated : 16 March 2014, 05:54 PM

শনিবার রাতে সদর উপজেলার আতাইকুলা কাকিলাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক সভায় এই যোগদান অনুষ্ঠান হয়।

জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর এলাকা পাবনায় এই অনুষ্ঠানে যোগদানকারীদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দলটির আতাইকুলা ইউনিয়ন শাখার নায়েবে আমির রাজ্জাক হোসেন রাজা।

স্থানীয়রা বলছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হরতাল-অবরোধে নাশকতায় জড়িত এসব জামায়াত নেতাকর্মীরা তাদের বিরুদ্ধে থাকা বিভিন্ন মামলা থেকে বাঁচতেই সরকারি দলে যোগ দিয়েছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি লুৎফর রহমান লতুর সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সদর আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স।

যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দল জামায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বাঁচাতে বিভিন্ন নাশককায় জড়িত জামাত-শিবিরের এসব নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে বরণ করে নেয়ার ব্যাপারে সাংসদ প্রিন্সের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

তবে সাংসদের ব্যক্তিগত সহকারী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রাসেল আলী মাসুদ বলেন, “আতাইকুলা ইউনিয়ন জামায়াতের নায়েবে আমির রাজ্জাক হোসেন, রোকন ফরিদ হোসেন, আজিম উদ্দিন শেখ, আজিজ ও উজ্জ্বলসহ দুই শতাধিক জামায়াত-শিবিরের কর্মী-সমর্থক এমপি সাহেবের ‘হাতে হাত রেখে’ জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।”

তারা জামায়াতের নেতাকর্মী হলেও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধসহ অন্য কোনো অভিযোগ নেই বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দাবি করেন তিনি।

আতাইকুলা থানার এসআই হালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত বছরের হরতাল অবরোধের সময় সরকারি অ্যাম্বুলেন্স, ট্রাক ও শিক্ষকদের মোটরসাইকেল পোড়ানোসহ বাড়িঘর ভাংচুরে আতাইকুলা ইউনিয়নের জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা জড়িত।

এসব অপরাধে জামায়াত-শিবিরের অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতার একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

যুদ্ধাপরাধী ও নাশকতাকারী জামাত-শিবিরের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে বরণ করার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলার মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।

এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ভাষাসৈনিক রণেশ মৈত্র বলেন, “জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে নেয়া দলটির অনেক নেতাকর্মীর সুবিধাবাদী রাজনৈতিক চরিত্র প্রকাশ করে।”

মামলা থেকে বাঁচতে ক্ষমতাসীন দলে যোগ দেয়া জামায়াতকর্মীদের চিরকালীন ভীতু মনের ও একই সঙ্গে চতুরতার প্রমাণ বহন করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জামায়াত আওয়ামী লীগের সঙ্গে গেলে দোষের কিছু নেই আর বিএনপির সঙ্গে থাকলে তারা রাজাকার হয়।”

এদিকে দল ছেড়ে জামায়াত নেতাকর্মীদের ক্ষমতাসীন দলে যোগ দেয়ার কারণ জানতে জেলা জামায়াতের আমির আব্দুর রহীমের মোবাইল ফোনে বার বার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

পাবনা সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহান যুদ্ধাপরাধের মামলায় কারাগারে রয়েছেন। বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন নিজামী। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচারও শেষের পথে রয়েছে।

আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া জামায়াত নেতা রাজ্জাক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।