জঙ্গি মদদে ‘বিদেশি শক্তি’: মতিয়া

বাংলাদেশের জঙ্গিরা বিদেশি রাষ্ট্রের মদদ পাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2014, 02:38 PM
Updated : 26 Feb 2014, 04:44 AM

বাংলাদেশকে হুমকি দিয়ে আল কায়েদা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরির হুমকির পর প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশকে খুন করে জেএমবি নেতাদের ছিনিয়ে নেয়ার প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার সংসদে বক্তব্যে এই অভিযোগ তোলে তিনি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাম উল্লেখ না করলেও যুক্তরাষ্ট্রের দিতে তার ইঙ্গিত স্পষ্ট।

“আমাদের কিছু দূতাবাস মাদ্রাসায় গিয়ে জঙ্গি শক্তির সঙ্গে বৈঠক করছে, তখন স্পষ্টই বোঝা যায় বিদেশি শক্তি নিজেরাই জঙ্গিদের লালন করে। জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের সখ্যতার অভাব দেখি না।”

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা গত ১৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের হাটহাজারী গিয়ে হেফাজতে ইসলামীর আমির শাহ আহমদ শফীর মাদ্রাসায় গিয়ে সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

গত বছর মতিঝিলে তাণ্ডবের পর হেফাজতের সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

জঙ্গিদের মদদের জন্য ‘বিদেশি শক্তির’ সঙ্গে বিএনপিকেও দায়ী করেন মতিয়া। 

“আন্তর্জাতিক জঙ্গী গোষ্ঠিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে তাদের বিন্দুমাত্র রাখ-ঢাক ও লজ্জাবোধ নেই।”

জঙ্গি ছিনতাই এবং ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজনের মৃত্যুকে ‘রহস্যময়’ আখ্যায়িত করে বক্তব্য দিলেও পুলিশ হত্যার বিষয়ে কথা না বলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমালোচনাও করেন তিনি।

“আপনি সৎজন, বিজ্ঞজন, শিক্ষকতায় ছিলেন। লেখাপড়া করেন বলেই জানি। তবে সম্প্রতি আপনার বক্তব্য-বিবৃতি শুনে টাইম ম্যাগাজিনের মতো কোনো ম্যাগাজিন পড়েন বলে মনে হয়নি। বিজ্ঞজন হিসাবে পড়াশোনার যে চেষ্টা ছিল, তা বজায় রাখবেন এবং জেনেশুনে কথা বলবেন।”

বাংলাদেশে জঙ্গিদের অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী টাইমে একটি প্রতিবেদনও সংসদে তুলে ধরেন মতিয়া।

তিনি বলেন, টাইম ম্যাগাজিনের ২০১০ সালের ২০ অক্টোবর অ্যালেঞ্জ পেরি প্রতিবেদন করেন। সেখানে বলা হয় ২০০১ সালের ২১ ডিসেম্বর আল-কায়দা ও তালেবান জঙ্গি বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

“পুলিশের হাতে ধরাপড়া এক জঙ্গি স্বীকার করে, একশ আফগান তালেবান ও আল কায়েদা চট্টগ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।”

মিশরীয় নাগরিক জাওয়াহিরির বাংলাদেশে আসার কথা ওই প্রতিবেদনে রয়েছে জানিয়ে মতিয়া বলেন, “জাহওয়াহিরি বেশ কয়েক মাস ঢাকায় থাকেন। এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে দেখা করেন। রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সহায়তায় গ্রীষ্মে চলে যান।”

জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিষয়ে তিনি বলেন, “বিশ্বে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে তৃতীয় হিসাবে ছাত্রশিবির চিহ্নিত হয়েছে। এরা চারদলীয় জোট এবং আল কায়েদা ও তালেবানদের সঙ্গে জড়িত।

“অথচ ২০০৪ সালে ছাত্র শিবিরের সম্মেলনে গিয়ে খালেদা জিয়ার পুত্রধন (তারেক রহমান) বলেছিলেন, ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদল এক মায়ের পেটে দুই ভাই।”

জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানকে ‘মামা’ ডাকত দাবি করে মতিয়া বলেন, “এটা সে সময়কার মুখ্য সচিব কামাল সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারাই বলত, ‘বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি’।”

মঙ্গলবার সংসদে বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাতীয় পার্টির তাজুল ইসলাম চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা ও তরীকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীও জঙ্গি উত্থানের জন্য বিএনপিকে দায়ী করেন।

শেখ বলেন, “বিএনপি-জামাত-জেএমবি সবই জঙ্গি সংগঠন। জাওয়াহিরি আল কায়দা বাহিনীর প্রধান। তিনি বিএনপির সময়ে তিনবার বাংলাদেশে এসেছিলেন।”

জামায়াত ও বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে শেখ সেলিম বলেন, “এরা রাজনৈতিক সংগঠন হতে পারে না।”

হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের বৈঠকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া এদের (হেফাজতে ইসলাম) নিয়ে দেশকে জঙ্গি সংগঠন বানাতে চায়। আর, বিদেশি কূটনীতিকরা এদের সমর্থন দেয়, যারা বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। তাদের সঙ্গে কূটনীতিকদের বৈঠক কিসের? এটা কিসের আলামত?”

জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান শেখ সেলিম।

এই অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তোফায়েল আহমদ বলেন, “২০০১ এর পর খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। জামায়াত-বিএনপির প্ররোচনায় জঙ্গিদের উত্থান ঘটেছে।”

জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা কেন করা হচ্ছে না, সরকারের কাছে সেই প্রশ্ন রাখেন তরীকত নেতা নজিবুল বশর।

“যদি কোনো রাজনৈতিক কারণ থাকে (নিষিদ্ধ না করার), তবে আমি বিকল্প প্রস্তাব দিচ্ছি। তাদের নিশ্বাস-প্রশ্বাস হচ্ছে টাকা-পয়সা। ইসলামী ব্যাংক-ইবনে সিনা হাসপাতালসহ যেসব প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলো বন্ধ না করে বাজেয়াপ্ত করা হোক। রাষ্ট্রায়ত্ত করা হোক।”

চট্টগ্রামের লালখান বাজারে হেফাজতে ইসলামের মাদ্রাসাও বাজেয়াপ্ত করারও দাবি জানান নজিবুল বশর।

জঙ্গি ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হোক।”

ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, “বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসাবে জঙ্গিদের সহায়তা করবে- তা মেনে নেয়া যায় না। বিএনপি-জামাত ও জেএমবি যৌথ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।”

বিরোধী দলের প্রধান হুইপ তাজুল জঙ্গি দমনে সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান।

“পুলিশের মোবাইল দিয়ে জঙ্গিরা কিভাবে কথা বলে? এ ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের কারো যোগসাজশ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।”

পুলিশের মোবাইলে জঙ্গিদের কথা বলার ঘটনা তদন্ত করা এবং এ বিষয়ে সরকারের ব্যাখ্যাও দাবি করেন তাজুল।