তবে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপির সঙ্গে আলোচনা চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ওই সংলাপে যদি সমঝোতা হয় তাহলে দশম সংসদ ভেঙে দিয়ে পুনরায় নির্বাচন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তবে এক্ষেত্রে আর বিরোধী দলকে ‘হত্যা’ বন্ধের শর্ত দিয়েছেন তিনি।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। তবে বিএনপি এই নির্বাচনের তফসিল স্থগিতের দাবিতে টানা অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে।
এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের এক সভায় ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করার বিষয়ে দৃঢ় অবস্থানের কথা জানালেও তারপর বিরোধী দলকে নিয়ে নির্বাচনের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি এই নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে দাবি করলেও তা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। উনি (খালেদা জিয়া) ট্রেন মিস করেছেন, উনি ইলেকশনে আসতে পারবেন না।”
নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকোর মধ্যস্থতায় সংলাপে বসেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা।
ওই সংলাপ শুরুর আগেই ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় পেরিয়ে যায়। এরপর থেকে বিএনপি নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়ে আসছে।
ওই সংলাপ এগিয়ে নেবেন জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “আমরা আলোচনা করছি, আলোচনা চলবে। নির্বাচন (৫ জানুয়ারি) হওয়ার পর আলোচনা চলতে থাকবে।”
“যদি এই আলোচনার মধ্য দিয়ে কোনো সমঝোতায় আমরা আসি, উনি (খালেদা জিয়া) হরতাল বন্ধ করেন, অবরোধ বন্ধ করেন, মানুষ পুড়িয়ে মারা বন্ধ করেন, মানুষের ওপর অত্যাচার বন্ধ করেন... ”
“তাহলে নির্বাচনের পর আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে যদি সমঝোতায় আসতে পারি, প্রয়োজনে আমরা পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে পুনরায় নির্বাচন দেব।”
সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দেয়ার কথা বলার শেখ হাসিনা আবার বলেন, “হরতাল-অবরোধ বন্ধ করতে হবে। মানুষ খুন করা বন্ধ করতে হবে। জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে হবে এবং মানুষের ওপর অত্যাচার বন্ধ করতে হবে।”
৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল অবরোধ চালিয়ে গেলেও কোনো ধরনের পিছু না হটার কথা আবারো বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
“নির্বাচন হচ্ছে এবং নির্বাচন হবে। সংবিধান মোতাবেক ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্বাচনের একটি স্থায়ী পদ্ধতি করে দিতে চাই। নির্বাচন প্রক্রিয়া যেখানে গেছে, নির্বাচন অব্যাহত থাকবে।”
নির্বাচন নিয়ে গণভবনে আওয়ামী লীগের এই বৈঠক হয়। এতে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, কার্যনির্বাহী পরিষদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা ছিলেন।
নির্বাচন বানচালের কোনো ধরনের চেষ্টা বরদাশত করা হবে না বলেও বিরোধী দলকে হুঁশিয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী।
“বাংলাদেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য যত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন, সেটা আমরা করব।”
বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের বর্জনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি ১৫৪ আসনের একমাত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন।
“বাংলাদেশে যে কয়টি রাজনৈতিক দল, কোনো দল যদি না আসে...আমরা জোটকে যেসব আসন দিয়েছি. সেখান থেকে আমাদের মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করে নিই, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই অনেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বতায় নির্বাচিত হবে।”
‘নির্বাচন বর্জনের উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো’- এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জামাত নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। কারণ বিএনপির মূল শক্তি হচ্ছে জামাত।
“আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, বিএনপি ঘরের ভেতর বসে লুকিয়ে থেকে আন্দোলন করলেও জামাত রাস্তায় নেমে মানুষ পুড়িয়ে মারে, রাস্তায় গাছ ফেলে অবরোধ করে।”
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতায় সরব পরিবেশবাদীদের হাজার হাজার গাছ কাটার বিষয়ে নিরবতায় ক্ষোভ জানান প্রধানমন্ত্রী।
“অবাক হয়ে যাই, একটু হলেই তারা কত কথা বলেন।মাইলের পর মাইল গাছ কেটে ফেলে রাখলেও একটি প্রতিবাদও তারা করেনি। মানুষ মারার প্রতিবাদ তো কেউ করেনিই।”
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া এবং রায় বাস্তবায়নও অব্যাহত থাকবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাবের প্রতিবাদও জানান তিনি।