ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড আর সহ্য করব না: হাসিনা

রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড আর ‘সহ্য’ করবেন না বলে বিরোধী দলকে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2013, 01:18 PM
Updated : 15 Dec 2013, 08:02 AM

তিনি শনিবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “মানুষের জীবন নিয়ে খেলা বন্ধ করেন। জামাতকে নিয়ে তাণ্ডব ঘটাচ্ছেন। ভাবছেন, অনেক কিছু করে ফেলবেন। বাংলার মানুষ তা মেনে নেবে না।

“অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। মা-শিশুকে একসাথে হত্যা করবেন। তা বসে বসে দেখব না। তা সহ্য করব? এটা হয় না।”

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধিতা করে জামায়াতে ইসলামীর অবরোধ-হরতালের মধ্যে এই হুঁশিয়ারি দিলেন সরকার প্রধান।

ফার্মগেইটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের এই আলোচনা সভায় সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার বিচারের রায় কার্যকরের বিষয়েও কথা বলেন তিনি।

“একটা রায় কার্যকর করেছি, বাকি রায় একের পর এক হবে”, মিলনায়তনে করতালির মধ্যে শেখ হাসিনা আরো বলেন, “শান্তি পাচ্ছি। একটা হলেও রায় কার্যকর করতে পেরেছি। লাখো শহীদ, লাখো মা-বোনের শপথ, এই মাটিতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব।”

বৃহস্পতিবার ফাঁসি কার্যকরের পর শনিবারই এই বিষয়ে কথা বলেন তিনি। যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডকে কেন্দ্র করে জামায়াতি সহিংসতায় এই পর্যন্ত নয়জন নিহত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে হবে না। আমার কাছে ক্ষমতা ভোগের বিষয় না- যাকে দিয়ে যেখান থেকেই ফোন করান।”

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মতদ্বন্দ্বে বিরোধী দলের আন্দোলনের মধ্যে বুধবার জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমার দুর্বলতা একটাই। সেটা হল, বাংলাদেশের জনগণ। বাংলাদেশের মানুষের জন্য যা করার করব, আমার বড় দুর্বলতা বাংলাদেশের জনগণ।

“যেটা ন্যায্য বলে মনে করবো- সেটাই করব। যত বাধাই আসুক না কেন, আমাকে আটকাতে পারবে না।”

জামায়াতে ইসলামী অংশ নিতে পারবে না বলেই বিএনপি নির্বাচনে আসছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“নির্বাচনে আসতে ইচ্ছা করে না, আসবেন না। জামাত আসবে না, উনি আসবেন না। খুন-খারাপি করবেন না। এর জবাব কিভাবে দিতে হয়, তা আমাদের জানা আছে।”

বিরোধী দলের আন্দোলনের বিষয়ে জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “নিয়াজীর দোসর কেউ এই দেশের মাটিতে টিকতে পারবে না। বিএনপি নেত্রীর ওপর টিক্কা খানের, নিয়াজীর প্রেতাত্মা ভর করেছে।দেশবাসী সাবধান।”

বিএনপির বর্জনের মুখে দশম সংসদ নির্বাচনে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে প্রায় অর্ধেক আসনে একক প্রার্থী থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।     

এই বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “উনি( খালেদা জিয়া) আসেন নাই। যে কয়টা রাজনৈতিক দল সর্বদলীয় সরকারে এসেছে, আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছি আলোচনা ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে। এজন্যই এত একক প্রার্থী।

“যারা আমাদের সঙ্গে সর্বদলীয় সরকারে আছে, তাদের জন্যই প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছি। বিএনপি এলেও এই প্রক্রিয়াই করতাম।”

আলোচনা সভা বিকাল ৩টায় শুরু হলেও শেখ হাসিনা ২৮ মিনিট পর আসেন। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে উঠলে উপস্থিত সকলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বুদ্ধিজীবী দিবসে আওয়ামী লীগের এই আলোচনা সভায় শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনের ছেলে শাহিন রেজা নূর বক্তব্য রাখেন।

পিনপতন নিস্তব্ধতায় শাহিন রেজা বলেন, “এই ১৪ ডিসেম্বর আমাদের জন্য অন্য আবহ নিয়ে এসেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা সকল চাপ উপেক্ষা করে ৪২ বছর আগের পাপাচারের বিচার কাজ সম্পন্ন করার কাজ শুরু করেছেন।”

কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় সব শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার এই অনুভূতি না থাকলে- বাংলাদেশ এই কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেত না।”

গত ২১ ডিসেম্বর প্রয়াত মা’র কথা স্মরণ করে শহীদের এই সন্তান বলেন, “৭১ এর ১০ ডিসেম্বরের  পর থেকে আমার মা তার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে চেয়েছিলেন। আমি গান গাইতে পারি না। তবুও আজ আমার শুধু বলতে ইচ্ছে করছে, আমার মাকে মনে পড়ে।”

এসময় বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনাও মাথা নিচু করে কাঁদতে থাকেন। বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে শেখ হাসিনার দিকে আঙুল দেখিয়ে শাহিন রেজা নূর বলেন, “আমাদের অসহায়ত্বের একমাত্র সহায়, তার দীর্ঘায়ু কামনা করি।

“তিনি আমাদের ভগ্নিরূপী, তিনি আমাদের মাতারূপী, তিনি শক্তিরূপী, তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।”

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আব্দুর রাজ্জাক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এস এম কামাল হোসেন ও ‍সুজিত রায় নন্দী।